Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অনেক দিন বাঁচিস, বলল দিদি আদিনা

শুক্রবার সাগরদিঘি থানা চত্বরে পুলিশের আয়োজিত গণ ভাইফোঁটায় তাই মিলে গেল সকলেই।

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা: সাগরদিঘিতে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা: সাগরদিঘিতে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

বোন নেই। তাই ভাইফোঁটার ঘনঘটা নেই বছর আটেকের সুকল্যাণ মন্ডলের। ভাই নেই বলে আবার দেবগ্রামের বছর ষাটেকের সরমা মন্ডল ফোঁটা দিতেন সাগদিঘির এক ধর্ম ভাইকে। হরহরির আদরা খাতুনের এক মাত্র ভাই থাকলেও বাড়িতে ফোঁটার বালাই নেই। শুক্রবার সাগরদিঘি থানা চত্বরে পুলিশের আয়োজিত গণ ভাইফোঁটায় তাই মিলে গেল সকলেই।

কেউ কারও পরিচিত নন। তবু সকলেই যেন সকলের চেনা ভাই বা বোন হয়ে উঠল এ দিন সকালে। জাতি-ধর্ম, আচার-রুচি ভেদাভেদ না রেখে সকলের মুখে উঠে এল সন্দেশ, কপালে ফোঁটা। ধান-দূব্বো দিয়ে অচেনা ভাই সুকল্যাণের কপালে ফোঁটা দিল সাগরদিঘির প্রথম বর্ষের কলেজ পড়ুয়া বর্ষা পাল। বাড়িতে নিজের এক ভাইকে ফোঁটা দিয়েই ছুটে এসেছেন এই গণ ফোঁটার অনুষ্ঠানে।

বাড়িতে পাঁচ ভাই, সকলেই আছেন। বয়স তিন কুড়ি পেরুনো চাঁদপাড়ার আদিবাসী পার্বতী কিস্কুর বাড়িতে ভাইফোঁটার বালাই ছিল না। গ্রামে ফোঁটা শুনেই প্রতিবেশিকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এ দিনের গণ ফোঁটায়। পার্বতী ও পুতুল সোরেন এ দিন থালা সাজিয়ে ফোঁটা দিলেন পাশাপাশি বসা দুই নেতা তৃণমূলের নুরজামাল ও সিপিএমের জ্যোতিরূপকে। সমসাবাদের কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় বাবার এক মাত্র মেয়ে। এত দিন ভাইফোঁটা দিয়েছেন প্রতিবেশিদের কাউকে। এ বার হাজির হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে। চন্দনের ফোঁটা দিয়ে আর্শীবাদ নিয়েছেন সাগরদিঘি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তামিজুদ্দিন মল্লিকের।

বাড়িতে দিদির কাছে ফোঁটা নিয়েই সটান হাজির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্ক চট্টোপাধ্যায়ও। বছর ত্রিশের আদরা খাতুন তাকে ফোঁটা দিয়ে মাথায় ধান দুর্বো দিয়ে আর্শীবাদ করেছেন, ‘‘ভাই, অনেক দিন বাঁচিস!’ শুভঙ্কের কথায়, “থানায় ঢুকতেই বন্দুক হাতে পুলিশ দেখে ভয় পেয়েছিলাম।

বন্দুক সরিয়ে পুলিশ কাকুই হাত ধরে এনে চেয়ারে বসিয়ে দিতেই ভয় কেটে গেল।’’ এলাকায় সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই যে পুলিশের এই উদ্যোগ জানাচ্ছেন ওসি জামালুদ্দিন মন্ডল। জামালুদ্দিন বলছেন, “ভাইফোঁটা, রাখী বন্ধন এখন ধর্মের গন্ডিতে বাঁধা নেই, সর্বজনীন উৎসবের রূপ নিয়েছে। উৎসব মানেই মেলামেশা। এ থেকে মনান্তর ও মতান্তর দুই কমে আসে। অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। এই ধরনের উৎসব বাড়বে, ততই মঙ্গল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Society Bhaidooj Sagardighi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE