Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, চিকিৎসা অমিল

একই অবস্থা চোঁয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। বহরমপুর-হরিহরপাড়া সড়কের ধারে শতাব্দীপ্রাচীন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চোঁয়া, মালোপাড়া, পদ্মনাভপুর, সাহাজাতপুরের মানুষের ভরসা।

বন্ধ: চোঁয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: চোঁয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
ডোমকল ও হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৯:২০
Share: Save:

পাকা বাড়ি আছে, শয্যা আছে, ডাক্তার নেই। আছেন কেবল ফার্মাসিস্ট।

হাসপাতালের জন্য বাম আমলেই জমি দিয়েছিলেন বাগডাঙার মানুষ। একশো দিনের কাজে শ্রম দিয়েছিলেন বাড়ি তৈরিতে। বছর ছয়েক আগে নতুন বাড়ি, বিছানা, আলো নিয়ে হেসে উঠেছিল বাগডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন, ১৬ কিমি উজিয়ে ডোমকল ব্লক বা মহকুমা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার ঝক্কিটা আর পোহাতে হবে না। বছর দুয়েক আগে হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসক আর ছ’জন নার্স ছিলেন। কিন্তু এক বছরে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। চিকিৎসকের সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যে। নার্স মোটে এক জন। ফার্মাসিস্ট ডাক্তারবাবু হয়ে উঠেছেন। হাসপাতাল চত্বরে গরু, ছাগল আর ঘোড়ার আনাগোনা বেড়েছে।

জুড়ানপুর থেকে সাদেক মণ্ডল এসেছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাঁর কথায়, ‘‘বছরখানেক আগেও এখানে এসে চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসক, নার্স, রোগীর ভিড়ে গমগম করত তখন। এখন দেখছি, সব গায়েব। ডোমকল যেতে হবে চিকিৎসার জন্য।’’ উত্তর গরিবপুরের সাহাদত মণ্ডল বা বাগডাঙার হাওয়াতন বেওয়াদের আক্ষেপ, তাঁদের মত গরিব মানুষদের পক্ষে কাজ কামাই করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ডোমকল যাওয়া সম্ভব নয়।

একই অবস্থা চোঁয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। বহরমপুর-হরিহরপাড়া সড়কের ধারে শতাব্দীপ্রাচীন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র চোঁয়া, মালোপাড়া, পদ্মনাভপুর, সাহাজাতপুরের মানুষের ভরসা। হরিহরপাড়া ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে এসেও পরিষেবা পাচ্ছেন না হাজার-হাজার মানুষ। গত এক মাস ধরে কোনও ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষকে হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বহরমপুরে যেতে হচ্ছে। এক জন ফার্মাসিস্ট থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় তিনি কাউকে ওষুধ দেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে এখানে দশটি শয্যা ছিল। ডাক্তার, নার্স ছিল। প্রসূতিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন খোলেই না। খুললেও কোনও কাজ হয় না। কোথায় যাব।’’ মালোপাড়ার মিরাতুন বিবি বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার কাদা পথ পেরিয়ে হাসপাতাল এলাম। এগারো মাসের সন্তানের জ্বর, সর্দি, কাশি। কিন্তু ডাক্তার নেই। ওষুধ পেলাম না।’’

হরিহরপাড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর জানান, ব্লক হাসপাতাল চালু রাখতে ওখান থেকে চিকিৎসক তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে ফার্মাসিস্ট সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধ দিতেই পারেন। চিকিৎসক পাঠানোর চেষ্টাও হচ্ছে।

ডোমকলের এসিএমওএইচ শুভরঞ্জন চন্দ বলেন, ‘‘বাগডাঙা স্বাস্থ্যেকেন্দ্রে ডাক্তার না থাকার কথা আমাদের জানা। শীঘ্রই নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ হওয়ার কথা। তা হলেই সমস্যা মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE