Advertisement
E-Paper

Ukraine crisis: তিন দিন ধরে ফ্ল্যাটেই বন্দি

টিকিটের দাম নিয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বিমানের যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকেই এখানেই ঘরবন্দি জীবন কাটছে।

রীতম পাল

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০২
ইউক্রেন ছাড়ছেন বহু মানুষ।

ইউক্রেন ছাড়ছেন বহু মানুষ। ফাইল চিত্র।

ইউক্রেনে খারকিভস্কা হাইওয়ে ৬১-এ এই ঠিকানায় একটি ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার থেকে টানা ঘরবন্দি হয়ে রয়েছি। দমবন্ধ অবস্থায় কাটছে আমাদের চার বন্ধুর। দেড় বছর আগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে এখানে এসেছিলাম ডাক্তারি পড়তে। এখন কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম ভাঙে বোমা ফাটার বিকট আওয়াজে। যেখানে থাকি সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে প্রেসিডেন্সিয়াল হাউসের আশপাশেই কোথাও ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে ছিল। আরও খানিক দূরে তখন থেকেই মুহূর্মুহু বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে। সেই আওয়াজ ঘরে বসেই শুনতে পাচ্ছি।

যেদিন এই ঘটনা শুরু হল তার কিছুদিন আগে থেকেই আঁচ পাচ্ছিলাম, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আমাদের আপাতত বন্ধ হয়ে যায়। ক্লাস অনলাইনে শুরু হয়েছিল। যুদ্ধের আশঙ্কায় আমরা এই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। চার জন গত ২৫ ফেব্রুয়ারির বিমানের টিকিট বুক করেছিলাম। ওইদিন ভোরবেলায় ভারতে ফেরার বিমান ছিল। টিকিটের দাম নিয়েছিল প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বিমানের যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকেই এখানেই ঘরবন্দি জীবন কাটছে।

বিদেশে পড়তে এসে এমন দুর্বিপাকে পড়তে হবে, ভাবিনি কোনও দিন। দেশে ফেরাও এখন অনিশ্চিত। সবে দু’ বছর হল ডাক্তারি পড়ার। কোর্স শেষ হতে আরও কয়েক বছর বাকি। কিন্তু ডাক্তারির পড়াশোনা শেষ করতে পারব কি না, তা-ই বুঝতে পারছি না। যুদ্ধ যখন শুরু হল, তখন আমাদের ঘরে কোনও খাবারই মজুত ছিল না। যে সংস্থার মাধ্যমে আমরা এখানে এসেছিলাম তারা জানিয়ে দেয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাবার মজুত করতে হবে। ফ্ল্যাট থেকে দুশো-তিনশো মিটারের মধ্যেই শপিং মল। সেখানে খাবার কিনতে গিয়ে দেখি, সব খাবার সেখানে নেই। জলের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে। আলু, পেঁয়াজ, রসু্‌ন, ডাল আর চাল কিনে ঘরে ফিরে আসি। ওইদিন দুপুর থেকে মোবাইলে সব ঘটনার উপর নজর রাখতে শুরু করি। তবে অমন বিকট শব্দে ভয় লাগতেও শুরু করে। বিকেল হতে না হতেই ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে দিই, যাতে কেউ বুঝতে না পারে ওই বাড়িতে কেউ রয়েছে।

সেদিন বিকেলে সাইরেন বাজতে শুরু করল। আমাদের আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল, সাইরেন বাজলেই যেন আমরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। আমরা যে ফ্ল্যাটে থাকি সেটি বেশ পুরনো। ফ্ল্যাটের নীচে বাঙ্কারে আমরা চার জন আর স্থানীয় কয়েক জন আশ্রয় নিই। শূন্যের কয়েক ডিগ্রি নীচে তাপমাত্রা। সেই ঠান্ডায় সারারাত বাঙ্কারে কাটাই। শুক্রবার ভোরে ফ্ল্যাটে চলে আসি। এ দেশের ভারতীয় দূতাবাস থেকে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি হয়ে আমাদের দেশে ফিরতে হবে। তবে কবে, তা স্পষ্ট করে জানায়নি। দিন তিনেক প্রায় না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কেটেছে। শনিবার সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে অনেক ক্ষণ ঘুমোলাম। বিকেলে দেখি, ফ্ল্যাটের সামনের গাছটা লাল ফুলে ভরে গিয়েছে। কিন্তু ওই রঙ বোধহয় রক্তের। শান্ত দেশটাকে এ ভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে দেখে মনটা বিষাদে ভরে যাচ্ছে।

লেখক কিভে ডাক্তারি পড়ুয়া

অনুলিখন: বিদ্যুৎ মৈত্র

Ukraine Russia Ukraine War Medical Student Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy