ছেলেকে দেখে আপ্লুত কিরণদেবী। —নিজস্ব চিত্র
ছেলের আনা হলুদ রঙা শাড়িটা দেখে চোখের জলকে বাগ মানাতে পারেননি কিরণদেবী। একই দশা ছেলেরও। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মাকে দেখে কেঁদে ফেলেন ছেলে সন্দীপ।
এক দিন সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া জেলার আমগাঁওয়ের বাসিন্দা কিরণ মিশ্র। তারপর আর কিছু মনে পড়ে না তাঁর। নানা জায়গা ঘুরে শেষে ঠাঁই হয় বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। চিকিৎসায় সেরে ওঠেন কিরণদেবী। খবর যায় ছেলে সন্দীপের কাছে। মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত মাকে ফিরে পান সন্দীপ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চাকদহ থানার পুলিশ কিরণদেবীকে উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। তার পর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। কিরণদেবীর চিকিৎসক বিশ্বজিৎ সিংহ জানান, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় কিরণদেবী ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। ফলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।
কিরণদেবীর ছেলে পেশায় পর্যটক সংস্থার কর্মী সন্দীপ জানান, তাঁরা দুই ভাইবোন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি বোনের বিয়ের কিছু দিন পর মায়ের মানসিক অসুস্থতা ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধও খেতেন। আচমকা এক দিন বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। অনেক খুঁজেও তাঁর কোনও সন্ধান পাইনি। আমগাঁও থানায় নিখোঁজ অভিযোগও করা হয়। কিন্তু মাকে কোথাও খুঁজে পাননি। কিরণদেবী জানান, ছত্তিসগড়ের রাইপুরে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। তারপরে তাঁর ঠিক কী ঘটেছিল মনে করতে পারেন না।
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের অঞ্জলি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সুমনা ভট্টাচার্য জানান, ‘অঞ্জলি’র কেন্দ্রে নিয়মিত যাতায়াত করেন কিরণদেবী। নিয়মিত কাউন্সেলিং করার ফলে দুর্গাপুজোর পরেই তিনি তাঁর বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেন। তারপরেই স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং পুলিশের সাহায্য নিয়ে কিরণদেবীর ছেলে সন্দীপের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ হয়।
গত ১৭ অক্টোবর কিরণদেবীর সঙ্গে ফোনে সন্দীপের কথা হয়। পরের দিনই তিনি বহরমপুর এসে মাকে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করে নিয়ে আসার পাশাপাশি যে চিকিৎসকের অধীনে কিরণদেবী হাসপাতালে রয়েছেন, ‘ছুটি’ দেওয়ার সময়ে তাঁর হাসপাতালে থাকাও জরুরি। ফলে তাঁকে বুঝিয়ে বহরমপুর আসা থেকে বিরত করা হয়। তবে ওই দিনই কিরণদেবী বহরমপুরে আসার সময়ে তাঁর জন্য নতুন একটি শাড়ি নিয়ে আসার কথা বলেন এবং ওই শাড়ি পরে তিনি বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথাও জানান।
মায়ের ওই আব্দার মেনে সন্দীপ দেখা করতে এসে মায়ের জন্য একটি নয় নতুন দু’টি শাড়ি নিয়ে আসেন। কিরণদেবী বলেন, ‘‘এত বছর পরে ছেলেকে দেখতে পেয়ে ভাল লাগছে। এখন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারব তাই ভাবছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy