Advertisement
E-Paper

খাবার চেয়ে কাঁদে খুদে, বিডিও নির্বিকার

এক মাস ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ। পড়ুয়া কমছে স্কুলে। দুপুরে খুদেরা খিদের জ্বালায় কাঁদছে। কিন্তু বিডিও মশাই নির্বিকার। রান্না করার স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে জলঙ্গির বিডিও-র বাছবিচারের জেরে প্রায়ই গণ্ডগোল হচ্ছে স্কুলে। তালা ঝোলানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেধে গেল হাতাহাতি। ভাঙচুর হল রান্নার চুল্লি ও আসবাব। তিন জন জখম।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৫
নওদাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে ভাঙচুরের পর। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নওদাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে ভাঙচুরের পর। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

এক মাস ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ। পড়ুয়া কমছে স্কুলে। দুপুরে খুদেরা খিদের জ্বালায় কাঁদছে।

কিন্তু বিডিও মশাই নির্বিকার।

রান্না করার স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে জলঙ্গির বিডিও-র বাছবিচারের জেরে প্রায়ই গণ্ডগোল হচ্ছে স্কুলে। তালা ঝোলানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেধে গেল হাতাহাতি। ভাঙচুর হল রান্নার চুল্লি ও আসবাব। তিন জন জখম।

কিন্তু বিডিও মশাই নির্বিকার। শুধু নির্বিকার নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে যার তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করছেন।

জলঙ্গির সাদিখাঁড়দেয়াড় পঞ্চায়েত এলাকার নওদাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের ঘটনা। বুধবারই এক দফা গণ্ডগোল বেধেছিল। এ দিন ফের তুলকালাম হয়। তার জেরে পরপর দু’দিন শিকেয় উঠেছে পঠনপাঠন। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে গোটা পরিস্থিতির জন্য গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ বিডিও সাধন দেবনাথকেই দায়ী করছেন।

নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯০। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার কৃষিনির্ভর। বহু পরিবার আছে যাদের বাড়িতে এক বেলা হাঁড়ি চাপে। ফলে এই এলাকার পড়ুয়াদের কাছে মিড-ডে মিল খুবই জরুরি জিনিস। অভিভাবকদের মতে, গ্রামের অনেক পড়ুয়াই কেবল পেটের টানে স্কুলে যায়। কিন্তু বিডিও কেন মর্জিমাফিক তিনটি গোষ্ঠীকে বেছে নিয়ে এই জটিলতা তৈরি করেছেন, তা কারও বোধগম্য হচ্ছে না। মিড-ডে মিল বন্ধ থাকায় ছাত্রের সংখ্যা কমছে। তার চেয়েও বড় কথা, বেলা ২টোর পরে ছাত্রেরা থাকতে চাইছে না। অনেকে খিদেয় কান্নাকাটি করছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রায়ই গণ্ডগোলের জেরে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। মাসখানেক ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ।’’ মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক রাজকুমার সাহা বলেন, ‘‘এই গোলমালের জেরে ছাত্র কমেছে। ছাত্রেরা দুপুর হলেই ‘খিদে পেয়েছে’ বলে ছুটি চাইছে। ওদের মুখের দিকে চাইতেও কষ্ট হচ্ছে। বাধ্য হয়েই ছুটি দিত হচ্ছে।’’

বেশির ভাগ গ্রামবাসী থেকে বাতিল হওয়া গোষ্ঠীর মহিলাদের অভিযোগ, বিডিও সাধন দেবনাথ ৩২টি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনটিকে বেছে নিয়ে বাকিদের নাম কেটে দেওয়াতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এত দিন ধরে অচলাবস্থা চললেও তাঁর কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই। বরং কোনও কথা বলতে গেলেই তিনি দুর্ব্যবহার করেন।

সাদিখাঁড়দেয়াড়ের একটি গোষ্ঠীর নেত্রী ফাউজিয়ারা বিবির আক্ষেপ, ‘‘এত দিন সুন্দর ভাবে সব চলছিল, কারও কোনও আপত্তি ছিল না। এই বিডিও তো কয়েক বছর ধরেই এই ব্লকে আছেন। এত দিন পরে তাঁর হঠাৎ মনে হল, শুধু তিনটি গোষ্ঠী ঠিক আর বাকিরা ভুল?’’ তাঁদের সন্দেহ, এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিশেষ কোনও ‘কারণ’ আছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘জটিলতা কাটানোর জন্য বিডিও-র দিকে চেয়ে আছি আমরা।’’

বিডিও সাধন দেবনাথ অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা করতে রাজি নন। তাঁর নির্বিকার বক্তব্য, ‘‘নতুন নিয়মে এতগুলি গোষ্ঠীকে রাখা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সব গোষ্ঠীর কাগজপত্র দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারও মুখ দেখে নয়। এখন, স্কুলে পঠনপাঠন এবং মিড-ডে মিল চালাবেন না বন্ধ রাখবেন, সেটা গ্রামের মানুষকেই ঠিক করতে হবে। গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।’’

কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ?

সাধনবাবুর সরাসরি ঊর্ধ্বতন যিনি, সেই মহকুমাশাসক (‌ডোমকল) তাহিরুজ্জামান বিন্দুবিসর্গ জানেন না। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে আগে একটা গোলমাল হয়েছিল, জানি। এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েওছিলেন। কিন্তু এক মাস ধরে যে মিড-ডে মিল বন্ধ হয়ে আছে, তা কেউ আমায় জানাননি।’’ জেলায় মিড-ডে মিলের নোডাল অফিসার তানিয়া পারভিন বলেন, ‘‘এমন কোনও খবর আমাদের কাছে আসেইনি। শুক্রবারই জলঙ্গির বিডিও-র কাছে রিপোর্ট চাইব।’’ কোনও খবর পাননি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস বৈশ্যও। তিনি বলেন, ‘‘এই সময়টা স্কুলে ছুটিছাটা থাকে, স্পোর্টস চলে। তাই হয়তো জানতে পারিনি। যত দ্রুত সম্ভব ওখানে মিড-ডে মিল চালুর ব্যবস্থা করছি।’’

নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, বাপ-মা হারানো চায়না খাতুন থাকে তার দিদার কাছে। দিদার নিজেরই দিন চলে না। দুপুরে স্কুলের খাবারটুকুই চায়নার ভরসা। শুকনো মুখে চায়না বলে, ‘‘আগে ভাবতাম, রোববারটা কেন যে আসে! স্কুলের খাবার পাই না। আর, এখন তো রোজই রোববার!’’

BDO Mid day meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy