ছবি সংগৃহীত
বাবা কাজ করতেন জাহাজে। মাসে একদিন বাড়ি আসতেন। আমরা সাত ভাই বোন। বাবার ইচ্ছে ছিল আমরা পড়াশোনা করে ভাল কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত হই। কিন্তু আমরা বাবার সেই ইচ্ছে কেউ পূরণ করিনি। চার বোনের বাবা বিয়ে দিয়ে দিলেন। তারা শ্বশুর বাড়ি চলে গেল। আমরা তিন ভাই মাঠে ঘাটে খেলা করে সময় কাটাই। বাবা কাজ থেকে অবসর নিলেন। তখন আমার বয়স ১৬ বছর। আমরা যেন কিছু করে জীবন যাপন করতে পারি তার চেষ্টা করতে থাকেন। আর আমরা বাবাকে গুরুত্ব না দিয়ে, নিজদের কাজ করতে থাকলাম। বাবার পেনশনের টাকায় আমরা খেয়ে ঘুরতাম। বুঝলাম বাবার মৃত্যুর পর কী ভুল করেছি ।
পড়াশোনা করলাম না, শিখলাম না কোনও কাজ। পড়লাম অথৈজলে। খিদেয় পেটে টান পড়েছে। শেষে জোগাড়ের কাজ করতে শুরু করলাম। বাড়িতে মা ও দুটো ছোট ভাই মায়ের পেনশন আর আমার সামান্য টাকা দিয়ে চার জনের সংসার কোনও মতে চলতে লাগল।
২০১৭ সালে বেশি টাকা রোজগারের আশায় চেন্নাই। সেখানে আমি রাজমিস্ত্রি। দৈনিক আয় আটশো থেকে বারশো টাকা। একদিন শুনলাম আমদের দেশে মারণ ব্যাধি করোনা ভাইরাস এসেছে। তাই এই রোগ সংক্রমণ ছড়াতে যেন না পাড়ে তার জন্য সরকার লকডাউন ঘোষনা করেছে। বন্ধ হয়ে গেল সব কাজ। তারপর আছে পুলিশের হয়রানি। চেন্নাই পুলিশের ভাষা আমরা বুঝতে পারতাম না, আবার তারাও আমার ভাষা বুঝতে পারে না। ফলে মাঝে মধ্যে পুলিশের দু’এক ঘা খেতে হোত। এদিকে হাতের পয়সাও শেষের দিকে। আমরা যে পাড়ায় থাকতাম তার আশে পাশে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনতাম আর ভয়ে আঁতকে উঠতাম। বাড়ি যে আসব তার কোন উপায় নেই। গাড়ি বন্ধ।
চেন্নাইতে মুর্শিদাবাদের অনেক শ্রমিক কাজ করে। আমাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। তৃতীয় দফা লকডাউন শুরু হতেই ঠিক করলাম বাড়ি যাব ফরাক্কা, সুতি ও শমসেরগঞ্জের ৫০ জন শ্রমিক একটি বাস ভাড়া দু'লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। তিন দিন রাস্তায় ছিলাম। রাস্তা ছিল ফাঁকা। দোকান পাট সব বন্ধ। কিছু কিনে খাওয়ার ও উপায় নেই। সঙ্গে ছিল চিড়ে তাই খেয়ে আসছিলাম। ঝাড়খণ্ডে একদিন খিচুড়ি দিয়েছিল তাই খেয়ে বাড়ি আসি। ধুলিয়ান পৌঁছে হাসপাতালে যায় সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ঘরে ঢুকে যায়। পাড়ার লোক ১৪ দিন বাড়ির বাইরে বের হতে বারণ করায় ঘরেই ছিলাম কোয়রান্টিনে।
বাড়ি ফিরে ঠিক করছি আর ভিন রাজ্যে কাজে যাব না। আয় কম হলেও নিজের দেশ অনেক ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy