হাত দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল প্রায় আধ ঘণ্টা। বাংলাদেশি বলে স্বীকারোক্তির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল ক্রমাগত। হরিয়ানা পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে এমন অত্যাচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ নদিয়ার চাপড়ার বাসিন্দা আনাজ শেখের। বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়ার পরের অভিজ্ঞতা ফোনে বলার সময়ে শিউরে উঠছিলেন তিনি। আনাজের কথায়, “বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে মাঝে মাঝে পায়ের নীচে চেয়ার দেওয়া হচ্ছিল। তখন একটু স্বস্তি। একের পর এক অফিসার এসে জেরা করছিলেন। এক জন খুব গালিগালাজও করছিলেন। কিন্তু আমি কেন নিজেকে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করব?”
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হরিয়ানার ফরিদাবাদে থাকেন আনাজ। তাঁর দুই দাদাও পরিবার নিয়ে ওই এলাকায় থাকেন। ভাঙা লোহালক্কড়ের ব্যবসা তাঁদের। আনাজের স্ত্রী রুমি বিবি আসন্নপ্রসবা। সে কথা জানিয়ে বার বার অনুরোধ করা হলেও আনাজকে সে রাজ্যের পুলিশ ছাড় দেয়নি বলে অভিযোগ। রুমির কথায়, “এক দিকে, যে কোনও মুহূর্তে প্রসবের সম্ভাবনা, অন্য দিকে স্বামীকে নিয়ে উৎকণ্ঠা। এ ভাবেই কেটেছে চারটে দিন।”
নদিয়া জেলার চাপড়া, নাকাশিপাড়া, তেহট্ট ও কৃষ্ণগঞ্জের জনা ত্রিশ পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করেছিল হরিয়ানার পুলিশ। তিন জনকে প্রথম দিন ছেড়ে দেওয়া হলেও, বাকি ২৭ জনকে চার দিন একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে শুধু চাপড়ারই ১৫ জন ছিলেন। নদিয়া জেলা পুলিশের তরফে ২৭ জনের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের নথিপত্র-সহ রিপোর্ট পাঠানোর পরে, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা ছাড়া পান।
তবে ছাড়া পেলেও তাঁদের আতঙ্ক কাটছে না। রাজাপুরের বাসিন্দা নিয়মাতুল্লা শেখ বলেন, “আমাকে পুলিশ শারীরিক নির্যাতন করেনি। তবে নিজেকে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। আবার, বাকিদের বাংলাদেশি পরিচয়ের কথা বলে দিলে ছেড়ে দেওয়ার টোপও দিয়েছিল।” তবে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল না বলে তাঁরা জানান। আনাজের কথায়, “চার বেলা খাবার দিয়েছিল। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বাইরে। দুশ্চিন্তায় আমার গলা দিয়ে খাবার নামছিল না।”
এত কিছুর পরেও অবশ্য নদিয়ায় ফিরে আসতে নারাজ আনাজেরা। নিয়মাতুল্লা বলেন, “যা-ই হয়ে থাক না কেন, আমাদের এখানেই থাকতে হবে। এখানেই ব্যবসা, সব কিছু রয়েছে। বাড়ি ফিরে গিয়ে কী করব? খাব কী?” একই প্রশ্ন রুমি বিবিরও। তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েদের মুখে দুটো খাবার তো তুলে দিতে হবে। ওখানে আয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই বলেই তো এখানে আসতে হয়েছে!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)