E-Paper

সরকারি ভাতা নয়, স্থায়ী কাজ চান পরিযায়ীরা

প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারেরই ‘কর্মসাথী’ নামে একটি পোর্টাল তো আগে থেকেই রয়েছে। ‘শ্রমশ্রী’র আলাদা বৈশিষ্ট্য কী? মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্লকের অনেক কর্তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ০৮:১১
শ্রমিকদের একাংশ ভাতার বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না।

শ্রমিকদের একাংশ ভাতার বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। —প্রতীকী চিত্র।

বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্যাচনের অভিযোগ ওঠার পরে তাঁদের রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে কর্মসংস্থানের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টাল খোলার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি জানান, ভিন্ রাজ্যে কর্মরত ২২ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক এই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করলে পরিচয়পত্র পাবেন। এককালীন পাঁচ হাজার টাকা ছাড়াও কাজে ব্যবস্থা না হওয়া ইস্তক মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে তাঁদের। পরিচয়পত্রের মাধ্যমেই মিলবে নানা সরকারি সুবিধা। সম্প্রতি যাঁরা রাজ্যে ফিরে এসেছেন, তাঁদেরও এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারেরই ‘কর্মসাথী’ নামে একটি পোর্টাল তো আগে থেকেই রয়েছে। ‘শ্রমশ্রী’র আলাদা বৈশিষ্ট্য কী? মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্লকের অনেক কর্তাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, পরিচয়পত্রের বিষয়টি নতুন। তবে দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা পোর্টালে এই বছর কালীগঞ্জ ব্লক থেকেই প্রায় নয় হাজার শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। এখনও পর্যন্ত ওই সংখ্যাটা প্রায় ২৪ হাজার।

যদিও শ্রমিকদের একাংশ এই ভাতার বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফল বেরনোর দিন দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় নিহত মোলান্দি গ্রামের তামান্না খাতুনের বাবা হোসেন শেখ বহু দিন ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “মাসে পাঁচ হাজার টাকায় সংসার চলে? একটা কারখানা হলেও অনেক শ্রমিক কাজ পেত। বাইরে গিয়ে কাজ মানেই তো রোজগার।”

প্রায় একই সুর আর এক পরিযায়ী শ্রমিক পিন্টু শেখের গলায়। কিছু দিন আগে ওড়িশায় পুলিশের খপ্পরে পড়েছিলেন তিনি। এখন বাড়ি ফিরলেও ফের দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “স্কুলে শিক্ষক নেই, মেয়েদের টিউশন ফি দিতেই মাসে দুই হাজার টাকা লাগে। অনুদান না দিয়ে সরকার যদি স্থায়ী কাজ দিত, তা হলে অনেক উপকার হত।”

ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নদিয়া জেলা সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্যের মতে, “রাজ্য সরকারের নীতির কারণেই মানুষকে বাইরে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হতে হয়। এখানে কাজ নেই, মজুরি কম, অথচ জীবনযাত্রার খরচ বেশি। পাঁচ হাজার টাকার ভরসায় সংসার চলে না। তার উপর অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেও অতীতে অনেকেই কোনও টাকা পাননি। দুর্নীতি হয়েছে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি হয়েছে।”

বিরোধী দলগুলির দাবি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টাল খোলা আসলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট টানতে। বাস্তবে এই প্রকল্প কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তবে কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আলিফা আহমেদের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী শ্রমজীবী মানুষের পাশে আছেন। ‘শ্রমশ্রী’ পোর্টালের মাধ্যমে ভিন্‌ রাজ্যে থাকা ২২ লক্ষ শ্রমিকই পরিচয়পত্র পাবেন। তাঁরা রাজ্যে ফিরে এলেও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন না।” তাঁর মতে, “এই উদ্যোগে হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হবেন। বিরোধীরা শুধু-শুধু সমালোচনা করছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Migrant Workers Government Schemes

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy