বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়।নিজস্ব চিত্র
ভরসন্ধ্যায় গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল বন্ধ ঘর থেকে। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তেহট্টের পূর্ব নওদাপাড়ায়। তড়িঘড়ি লোকজন ছুটে যান। তাঁরা গিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ।
দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখা যায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সাগরী বিবি (২৫), তাঁর দুই মেয়ে হালিমা খাতুন (৬) ও সারমিনা খাতুন (৪)। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় তেহট্ট হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তিন জনকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পরে শোকস্তব্ধ পূর্ব নওদাপাড়া। পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিদগ্ধ হয়েই মারা গিয়েছেন তিন জন। কিন্তু কী ভাবে এমনটা ঘটল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা সাগরীর স্বামী সাহিন দফাদার।
বুধবার সাগরীর কাকা চাঁদু হালসানা সাহিন ও তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তেহট্ট থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তিন জনের খোঁজেই তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে চাপড়ার বেতবেড়িয়ার বাসিন্দা সাগরীর সঙ্গে বিয়ে হয় সাহিনের। সাহিন বহু দিন থেকে মহারাষ্ট্রের পুণেতে একটি হোটেলে কাজ করেন। পূর্ব নওদাপাড়ার বাড়িতে থাকতেন সাহিনের স্ত্রী, দুই মেয়ে, বাবা বাবর আলি দফাদার ও মা রাবিয়া বিবি। বেশ কয়েক মাস পর পর বাড়ি আসতেন সাহিন।
পড়শিদের অভিযোগ, সাহিন মাত্রাছাড়া মদের নেশা করত। বাড়িতে এলেও তিনি মদ খেতেন। স্ত্রী সাগরী স্বামীর এই নেশা করা একেবারেই বরদাস্ত করতেন না। ফলে শুরু হতো অশান্তি। দিন চারেক আগে পুনে থেকে বাড়িতে ফেরেন সাহিন। পরের দিন থেকেই মদ খাওয়া নিয়েই স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি শুরু হয়।
মঙ্গলবারেও সকাল থেকেই শুরু হয় অশান্তি। পড়শিরা বলছেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই ওদের ঝগড়া হতো। পরে তা মিটেও যেত। কিন্তু সেই কারণেই যে তিনটে প্রাণ এ ভাবে চলে যাবে তা ভাবতেই পারছি না।’’
তবে এই ঘটনার পরে এলাকার লোকজন বেশ কিছু প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘ঘরে আগুন লাগলেও পাশের কেউ তাঁদের চিৎকার বা কোনও আওয়াজ শুনতে পেলেন না কেন? ধোঁয়া দেখে লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন, দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ। বাইরে থেকে দরজা লাগাল কে? ঘটনার সময় সাহিন ও তাঁর বাবা-মা কোথায় ছিলেন?’’
পড়শি মুঞ্জিল দফাদার ও সাগরীর মাসি কোহিনুর বিবিদের কথায়, ‘‘পাড়ার মধ্যেই সাগরীর বাড়ি। ঘরের মধ্যে তিনটে তরতাজা প্রাণ পুড়ে শেষ হয়ে গেল। অথচ কেউ কিছু টেরই পেল না। সবাই যখন ছুটে গেল, সব শেষ। পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করলেই আসল ঘটনা সামনে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy