Advertisement
E-Paper

রোদ্দুর মুছে এ বারে মেঘ

মঙ্গলবার বিকেলে, প্রশ্নটা তাঁর নিতান্তই আটপৌরে এক চালায় বড্ড ধাক্কা খাচ্ছে। ছেলে স্বস্তি খুজছে, ‘‘বাবা সময় পেল কোথায়!’’ আর পাশ করার আনন্দ মেঘে ঢেকে, তাঁর স্ত্রী বিড় বিড় করছেন, ‘‘মানুষটা মাঠের কাজে দিনরাত এক করে পড়ে থেকেছে, পড়বে কখন!’’

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ১৩:২০
ভরসা: স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে বলরাম। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ভরসা: স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে বলরাম। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দু’বছর আগে ছবিটা ছিল অবিকল শীতের রোদ্দুর— বাবা-মা’র সঙ্গে সদ্য মাধ্যমিক পাশ ছেলে, একেবারে নিপাট বিজ্ঞাপন!

এ বার, সেই ফ্রেমে এক টুকরো মেঘ। ছেলের হাত ধরে উচ্চ মাধ্যমিকটা মা পাশ করে গেলেও আটকে গিয়েছেন বাবা।

ভারী মুখে তিনি শুধু বলছেন, ‘‘সব পরীক্ষায় এক বারে পাশ দেওয়া যায় নাকি!’’

মঙ্গলবার বিকেলে, প্রশ্নটা তাঁর নিতান্তই আটপৌরে এক চালায় বড্ড ধাক্কা খাচ্ছে। ছেলে স্বস্তি খুজছে, ‘‘বাবা সময় পেল কোথায়!’’ আর পাশ করার আনন্দ মেঘে ঢেকে, তাঁর স্ত্রী বিড় বিড় করছেন, ‘‘মানুষটা মাঠের কাজে দিনরাত এক করে পড়ে থেকেছে, পড়বে কখন!’’

হাঁসখালির পাটিকাবাড়ির বৃষ্টি ভেজা গ্রাম। মধ্য চল্লিশের বলরাম মন্ডল সাত সকালে খবরটা নিজেই বয়ে এনেছিলেন, ‘‘তুমরা পাশ দিয়েছ গো!’’ ছেলে-বৌ’কে খুশি দেখেই একটু বুঝি থমকে গিয়েছিলেন। বুঝতে দেরি হয়নি, গত বারের পুররাবৃত্তি হয়নি এ বার। তবে, ছেলে বিপ্লবকে জ়ড়িয়ে ধরেই বলরাম বলছেন স্ত্রীকে, ‘‘তুমাকে এ বার কলেজে ভর্তি করে দিব গো!’’

তার পর লুঙ্গির উপরে রঙ ওঠা জামাটা চাপিয়ে আবারও ফিরে যাচ্ছেন মাঠে। একটিু নিরিবিলিতে থাকবেন বলে। উঠোনের এক কোনে ছাগলকে ঘাস দিচ্ছিলেন স্ত্রী কল্যাণী। দু’বছর আগে ছেলের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এ বার একই সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক। তবুও কিছুতেই খুশি নন, ‘‘সবাই পাশ করলে আরও ভাল লাগত, লোকটার জন্য কষ্ট হচ্ছে।”

চার ভাই। অভাবের সংসার হওয়ায় নবম শ্রেণির পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি বলরামের। কিন্তু পড়াশোনার ইচ্ছেটা রয়ে গিয়েছিল। স্বপ্ন দেখতেন কল্যাণীও। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর অভাবের সংসারে এসে পড়াশোনাটা হয় নি তাঁরও। ছেলে বড় হতে দু’জনে তাই ছেলের সঙ্গেই দু’বছর আগে বসে ছিলেন মাধ্যমিকে। পাশও করে গিয়েছিলেন।

প্রতি দিন ভোরে উঠে সব কাজ সামলে তিন জন সাইকেলে চেপে যেতেন প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের স্কুলে। ছেলের বন্ধুদের সঙ্গে বসে ক্লাস করতে প্রথম প্রথম লজ্জা করলেও পরে সেটা কেটে গিয়েছিল। সংসারে অভাবের কারণে শুধু ছেলের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছিল। দু’জনে ছেলের কাছ থেকে নোট নিতেন।

সন্ধ্যায় দরমার বেড়া আর টালির চালের ঘরে দরজা বন্ধ করে মুখোমুখি পড়তে বসতেন তিন জনে। খেতে খেতে আলোচনা করতেন পড়া নিয়েই। প্রথম দিকে পড়শিরা হেসেছে। কিন্তু পরে তাদের এই স্বপ্নকে হাততালিই দিয়েছেন। তাই সুকুমার নায়েক, সরস্বতী মন্ডলরা বলছেন, “বলরামটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে জানেন। বেচারারা বড্ড কষ্ট করেছে পাশ করলে সত্যিই ভাল লাগত।’’

Higher Secondary Results 2017 উচ্চ মাধ্যমিক Passed Mother Son Father
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy