Advertisement
E-Paper

শহর ছাড়লেন সন্ন্যাসিনী, বিষণ্ণ রানাঘাট

গোটা শহর অপেক্ষায় ছিল, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে কবে ফিরবেন বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী। শুক্রবার সকালে গোটা শহর জানতে পারল, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি শহর ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্যত্র! আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাওয়ায় বুধবার সকালে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:২৪
রানাঘাটে পথ নাটিকা।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

রানাঘাটে পথ নাটিকা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

গোটা শহর অপেক্ষায় ছিল, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে কবে ফিরবেন বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী। শুক্রবার সকালে গোটা শহর জানতে পারল, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি শহর ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্যত্র!

আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাওয়ায় বুধবার সকালে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে। কিন্তু আরও কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন করেছিলেন ওই বৃদ্ধা। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়েছিল। হাসপাতাল সুপার অতীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “ওই সন্ন্যাসিনী চলে যেতে চেয়েছিলেন কোনও ভিড় ছাড়াই। আমরা তাঁর কথা রেখেছি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ২টো ২০ নাগাদ হাসপাতাল থেকে ওই সন্ন্যাসিনী রওনা দেন দমদম বিমান বন্দরের উদ্দেশে। হাসপাতালের এক কর্মী বলছেন, “ঘটনার প্রথম দিন থেকেই ওই সন্ন্যাসিনী সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছিলেন। এ দিনও যাতে তাঁর যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যম জানতে না পারে, সেই কারণেই অত রাতে তিনি হাসপাতাল ছাড়লেন।”

রানাঘাটের ওই কনভেন্টের এক আয়া এই ক’দিন হাসপাতালে ওই সন্ন্যাসিনীকে দেখাশোনা করতেন। ওই সন্ন্যাসিনী হাসপাতাল ছেড়ে অন্য শহরে চলে গিয়েছেন শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, “অন্য দিনের মতো এ দিনও সকাল সাতটায় হাসপাতালে যাই। গিয়ে জানতে পারি উনি চলে গিয়েছেন। তিনি আমাকে এতটাই ভালবাসতেন যে আমি কষ্ট পাব বলে আমাকে আগে থেকে কিছু জানাননি।”

ওই সন্ন্যাসিনীর শহর ছাড়ার সংবাদে বিষণ্ণতার ছায়া নেমে এসেছে গোটা শহরে। স্থানীয় এক অভিভাবিকা শ্যামলী দে বলেন, “খুব ভাল মানুষ ছিলেন ‘সিস্টার সুপিরিয়র’। বছরখানেক আগে সুপিরিয়র হিসাবে তিনি এই স্কুলের দায়িত্ব নেন। এ দিন স্কুলে এসে জানতে পারলাম, তিনি নাকি আর কোনওদিনই এই শহরে ফিরবেন না! ওঁর সঙ্গে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা সকলেই লজ্জিত। বয়স্ক মানুষটার ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও আমরা দিতে পারলাম না।” আর এক অভিভাবিকা কাকলি মজুমদার বলেন, “সবথেকে বড় কথা তিনি কী যন্ত্রণা নিয়ে এখান থেকে ফিরে গেলেন! সিআইডি, সিবিআই, রাজনীতি বুঝি না, আমরা দুষ্কৃতীদের চরমতম শাস্তি চাই।”

রানাঘাটে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

ওই সন্ন্যাসিনী চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন স্কুলের পড়ুয়ারাও। দশম শ্রেণির ছাত্রী অদিতি বিশ্বাস, দ্বাদশ শ্রেণির লিমা ডি রোজারিও, একাদশ শ্রেণির রিয়া চক্রবর্তীদের কথায়, “একজন মমতাময়ী মহিলার স্নেহ থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। আমরা ভাবতেই পারছি না, স্কুলের দোতলায় তিনি আর থাকবেন না। মাঝেমধ্যে নেমে এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করবেন না।” স্থানীয় বাসিন্দা লতা বিশ্বাস বলছেন, “সবকিছু ত্যাগ করে সারাটা জীবন ওই বৃদ্ধা শুধু লোকজনের সেবাই করে গেলেন। তার বিনিময়ে শেষ জীবনে এসে তিনি কী পেলেন! এমন ঘটনা আমাদের সকলের লজ্জা, রাষ্ট্রের লজ্জা।”

রানাঘাটের ওই কনভেন্টে বৃহস্পতিবার ছিল আইসিএসসি-র কম্পিউটর ও আইএসসি-র রসায়ন পরীক্ষা। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওই পরীক্ষা চলেছে নির্বিঘ্নেই। এ দিনও স্কুলে পুলিশ মোতায়েন ছিল। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন অভিভাবকেরাও। তবে এ দিন সিআইডির তৎপরতা ছিল বৃহস্পতিবারের তুলনায় অনেকটাই কম। সারাদিনে কয়েকবার সিআইডির লোকজন স্কুলে এসেছিলেন। এ দিন তাঁরা বেশিরভাগ সময় স্কুলেই ছিলেন। তবে দুপুর তিনটে নাগাদ সিআইডির তিন কর্তা স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেন।

এ দিনও সকাল দশটা থেকে রানাঘাট প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যরা তাঁদের কর্মসূচি পালন করেছেন। বিকেল তিনটে নাগাদ কলকাতার ‘পথ’ নামে একটি সংস্থার সদস্যরা রানাঘাটে গিয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি পথনাটিকা করেন। সেই নাটককে ঘিরে ভিড় করেন এলাকার বহু মানুষ। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা রানাঘাটের ওই কনভেন্টের পড়ুয়া ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি মিছিল বের করেন। সেই মিছিলে যোগ দেন প্রতিবাদী মঞ্চের সদস্যরাও।

চেতনার মাঠ থেকে রানাঘাট কলেজের সামনে দিয়ে গোটা শহর পরিক্রমা করে ওই মিছিল। এ দিন ওই মিছিলে ছিলেন প্রসেনজিৎ বসুও। তিনি জানান, রানাঘাটের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে সেখানে প্রশাসন বলে কিছু নেই। তাঁরা কোনও দলের পক্ষ থেকেও আসেননি। সাধারণ মানুষ ও পড়ুয়ারা যে আন্দোলন করছেন তাঁরা তাঁদের সঙ্গে আছেন। প্রসেনজিৎবাবুর আক্ষেপ, “কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই আন্দোলনে যাঁরা সামিল হয়েছেন তাঁদেরকে মাওবাদী আখ্যা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আন্দোলন করবেন এখানকার মানুষ। তাঁরাই ঠিক করবেন আন্দলনের রূপরেখা। আমরা শুধু তাঁদের পাশে থাকব। আমরা কোনও কিছু তাঁদের উপর চাপিয়ে দেব না। রাজনীতির রং না লাগিয়ে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। আমাদের দাবি এইটুকুই।” সিপিএমের মহিলা সমিতির পক্ষ থেকেও এ দিন একটি মিছিল বেরোয় রানাঘাটে।

ranaghat nun rape Mother Superior Police CID CBI Don Bosco
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy