বেলা এগারোটা। ভাদ্রের গরমে দিব্যি জুড়িয়ে যাওয়া আমেজ নিয়ে ঠান্ডা হয়ে ছিল কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল সুপারের ঘর।ভারী পর্দা সরাতেই চোখে পড়ছে প্রায় নিভু-চোখে ঘর দখল করে আধ শোয়া চার হাসপাতাল কর্মীকে। শনিবার সকালে হাসপাতালে সবাইকে চমকে দিয়ে ‘ভিজিটে’ এসে নিজেই চমকে গেলেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, মুকুল রায়।সুপারের ঘরে উঁকি মেরেই তাঁর ভ্রূ কুঁচকে যায় তাঁর— ‘‘ওঁরা কারা!’’
ওই পদে সদ্য ফিরেছেন মুকুল। বছর কয়েক আগেও, তিনি যখন তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর, তখন এমন ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ হত ঘন ঘন। তার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা। আর ‘নজরদারিহীন’ সেই ফাঁকটুকু বুজিয়ে ফেলার সুযোগ হাতছাড়া করেনি হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ।
ছবিটা প্রায়ই রকম বদলে গিয়েছিল কল্যাণীর আর এক হাসপাতাল, জেএনএমেও। সেখানে ইত্যবসরে ওই ‘বেপরোয়া কর্মীদের’ মাথায় ছায়া হয়ে গজিয়ে উঠেছিলেন শাসক দলেরই স্থানীয় এক কাউন্সিলর। আয়া থেকে অ্যাম্বুল্যান্স— সব ক্ষেত্রেই তাঁর দাপাদাপিতে শুধু হাসপাতাল কর্মী নন, তঠস্থ হয়ে থাকতেন চিকিৎসকেরাও। অনর্গল চোটপাট চলত, এমনকী রোগীর বাড়ির লোকজনের উপরেও।
দুই হাসপাতালেরই রোগী কল্যাণ সমিতিতে ফেরার পরে সেই ‘অব্যবস্থা’টাই মুছতে চাইছেন মুকুল। দলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘আসলে, পুরনো জমি একটু একটু করে ফিরে পেতে চাইছেন মুকুলদা!’’ তাঁর অমুগামীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, জেলায় তাঁর হারানো কর্তৃত্বটা কায়েম করতে, যে সব পদে তিনি রয়েছেন সেগুলির সুনাম ফেরানোই এখন লক্ষ্য তাঁর।
আর তা করতে গিয়েই এ দিন গাঁধী মেমোরিয়ালে এমন লাগাম ছাড়া অব্যবস্থার মুখোমুখি পড়লেন তিনি। যা দেখে ক্ষুব্ধ মুকুল বলছেন, ‘‘দেখলাম, কী হাল বুঝলাম। দলনেত্রীর নির্দেশ রয়েছে, এ সব বরদাস্ত করা হবে না। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ওই হাসপাতালের সুপার কোথায়? খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তিনি অধিকাংশ শনি-রবি হাসপাতালে আসেন না। কেন?
আমতা আমতা করে সুপার বীরেন্দ্রপ্রসাদ সাহু বলছেন, ‘‘আজ বিশ্বকর্মা পুজো...ছুটির দিন তো, তা ছাড়া শনিবার।’’ কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোয় তো সরকারি ছুটি নেই? এ বার তাঁর জবাব, ‘‘আসলে আমি তো ছুটিতে।’’ মুকুলের সঙ্গেই ছিলেন গয়েশপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মরণ দে আর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী। তাঁদের দিকে তাকিয়ে মুকুল বুঝিয়ে দেন, এই ‘অব্যবস্থাটা’ আদৌ বরদাস্ত করবেন না তিনি।