অমল গুপ্ত ওরফে পল্টু। — নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধৃত অমল গুপ্ত জামিন পেলেন।
বুধবার, কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিন এ দিন মঞ্জুর করেছেন।
অমলবাবুর আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ডিভিশন বেঞ্চ শর্ত দিয়েছে, আদালতে হাজিরা দেওয়ার পাশাপাশি, আপাতত মুর্শিদাবাদ জেলায় ঢুকতে পারবেন না অমল। এ দিন অমলের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী প্রসূন দত্ত। তবে, ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর বিরোধিতায় আমল দেয়নি।
গত অগস্ট মাসে বহরমপুরের ওই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়, ‘ষড়যন্ত্র’।
মুখ্যমন্ত্রী ‘অর্ম্তঘাতের’ দাবি করতেই খোঁজ পড়েছিল ‘অপরাধীর’। তিন দিনের মাথাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল বহরমপুরের পরিচিত কংগ্রেস কর্মী অমল ওপফে পল্টুকে।
এ দিন তাঁর জামিনের খবর, মন মরা হয়ে থাকা কংগ্রেস অফিসেও যেন কিঞ্চিৎ অক্সিজেন জুগিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় কর্মীরা। হাসপাতাল চত্বরে কংগ্রেসের রোগী পরিষেবা কেন্দ্রের চত্বর থেকে দলীয় কার্যালয়— সর্বত্রই কর্মীদের মিষ্টিমুখ করাতে দেখা গিয়েছে।এখন প্রশ্ন, কে এই পল্টু?
নিজের ভাল নামটা একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন অমল গুপ্ত। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে চিকিৎসক থেকে, রিকশা চালক— তাঁকে ওই পল্টুদা নামেই চেনেন।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের দেওয়াল ঘেঁষা এক কামরার পাকাপোক্ত ঘর, এলাকার তামাম মানুষজন যাকে চেনেন— পল্টুদার ঘর।
হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন, সাত সকালেই সিআইডি-র কর্তারা হানা দিয়েছিলেন ‘পল্টুদার’ সেই ঘরে। সেখানে তাঁকে না পেয়ে গোরাবাজারে তাঁর বাড়িতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সিআইডি কর্তারা। তার পর শুরু হয়েছিল জেরা।
কেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সে সময়ে দাবি করেছিলেন— ‘‘এ তো খুব সহজ, মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই একটা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করছেন। আর তাতে পল্টুর মতো এক জন রোগী-সেবায় প্রাণপাত করা কংগ্রেস কর্মীকে জড়িয়ে দিয়ে গ্রেফতার করতে পারলেই কাজ তাদের অনেকটা সহজ হয়ে যাবে!’’
দীর্ঘ দিন ধরেই অধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পল্টুর পরিচয়। পেশায় বহরমপুর পুরসভার কর্মী পল্টু যে ‘দিন-রাত’ এক করে হাসপাতালেই পড়ে থাকেন স্থানীয় মানুষজনও তা কবুল করেছেন।
তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, ‘পল্টুদার’ ওই ঘর আদতে ‘ঘুঘুর বাসা’।
প্রায় আড়াই দশক ধরেই কংগ্রেসের রোগী পরিষেবা কেন্দ্রের ওই অফিস ঘরের দায়িত্বে রয়েছেন পল্টু। কংগ্রেসের দাবি, আমজনতার জন্য হাসপাতালে থেকে সাহায্য করাই পল্টুর ‘নেশা’।
তবে দীর্ঘ দিন ধরে হাসপাতালের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার ফলে সেখানকার নানান খোঁজ-খবরও যে তাঁর নখদর্পনে তা মেনে নিয়েছেন কংগ্রেসের অনেকেই। হাসপাতালের ঝাড়ুদার থেকে আয়া-নার্স এমনকী চিকিৎসকেরাও যে তাঁকে ‘সমঝে’ চলেন, তা-ও মেনে নিয়েছেন দলের অনেকে।
অগ্নিকাণ্ডের পরে পল্টুর দাবি ছিল— ‘‘দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ এক রোগীর সঙ্গে হাসপাতালের দোতলায় গিয়েছি। এমন সময় ‘আগুন! আগুন! চিৎকার শুনে মুখ ফেরাতেই দেখি তালাবন্ধ ভিআইপি কেবিন থেকে গলগল করে ধোঁয়া বের হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy