Advertisement
E-Paper

দিনভর সঙ্গী ছিল হয়রানি, সন্ধ্যায় উঠল অবস্থান

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, ‘‘আন্দোলন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জুনিয়র ডাক্তাররা আমাদের কিছু জানাননি। তবে ওঁরা যেখানে বসে আন্দোলন করছিলেন সেখান থেকে উঠে গিয়েছেন।’’   

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০৩:০৯
দুর্ভোগ: বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

দুর্ভোগ: বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

অবশেষে অবস্থান-বিক্ষোভ উঠল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে আগের দু’দিনের মতো বৃহস্পতিবার দিনভর হয়রান হতে হল দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের।

এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। প্রথমে অনুরোধ, তার পরে বচসা ও শেষতক আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে তুহিন খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমরা অবস্থান করে যে আন্দোলন করছিলাম তা প্রত্যাহার করে নিলাম।’’

যদিও সূত্রের দাবি, আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা চাপে পড়েই কর্মবিরতি তুলে নিয়েছেন। আবু তাহের খান অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও চাপ নয়, আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। ওঁরা সেই অনুরোধ রেখেছেন। আমরা ওঁদের পাশে আছি।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, ‘‘আন্দোলন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জুনিয়র ডাক্তাররা আমাদের কিছু জানাননি। তবে ওঁরা যেখানে বসে আন্দোলন করছিলেন সেখান থেকে উঠে গিয়েছেন।’’

বৃহস্পতিবার সকালে শুধুমাত্র মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগ চালু হয়েছিল। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক চলার পরে জুনিয়র ডাক্তাররা গিয়ে সেটিও বন্ধ করে দেন। অভিযোগ, হাসপাতালের ২০টি বহির্বিভাগের মধ্যে বৃহস্পতিবার মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগের জন্য টিকিট দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসকেরা সেখানে চিকিৎসাও করছিলেন। মাঝপথে জুনিয়র ডাক্তাররা সেই বহির্বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে রোগীদের বের করে দেন বলেও অভিযোগ।

এ দিন বিকালে জুনিয়র ডাক্তাররা জরুরি বিভাগের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পরে হাসপাতাল চত্বর ঘুরে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপির অফিসের সামনে যান। নিরাপত্তাকর্মীরা এমএসভিপির অফিসের দরজা বন্ধ করে দিলে সেই দরজা খুলে তাঁরা ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এমএসভিপিকে তাঁর অফিসের সিড়িতে পেয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান। আন্দোলন প্রত্যাহারের আগে তুহিন খান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বহিরাগত বললেন, হুমকি দিলেন। আমরা কি হুমকি পাওয়ার যোগ্য?’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের কথা শুনলেন না। উল্টে বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করলেন। আমাদের কোনও রং নেই। আমরা ডাক্তার। এটাই আমাদের পরিচয়।’’

বৃহস্পতিবারেও বিনা চিকিৎসায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে হাসপাতালে লিখিত কোনও অভিযোগ হয়নি। এই নিয়ে গত তিন দিনে বিনা চিকিৎসায় তিন জন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। শুধু বুধবার নবগ্রামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

সম্প্রতি দৌলতাবাদের টুলুয়ারা বিবিকে কুকুরে কামড়েছে। তাঁর এ দিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় তা হয়নি। টুলুয়ারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে যে চিকিৎসা বন্ধ তা তিনি জানতেন না। দেওরের ছেলে সুজনকে নিয়ে বহির্বিভাগে এসেছিলেন ডোমকলের জিতপুরের হামিদা বানু। তিনি বলেন, ‘‘সুজনের পায়ে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা বহির্বিভাগ থেকে আমাদের বের করে দিল। এ কী অরাজকতা চলছে!’’

হাসপাতালের এমএসভিপি দেবদাস সাহার দাবি, ‘‘বহির্বিভাগে চিকিৎসা না হলেও জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। এ দিন একটি বহির্বিভাগ চালু হলেও গন্ডগোল এড়াতে সেটি বন্ধ রাখতে হয়েছিল।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কথা বললেও রোগীর পরিবারের লোজকনের দাবি, চিকিৎসা পরিষেবা স্তব্ধ। চিকিৎসক কম থাকার কারণে ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না। আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবার রাতে বিনা চিকিৎসায় এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। বুধবার নবগ্রামের নিমগ্রামের ফেলু শেখ (৩০) নামে এক যুবকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার বিকেলে মৃতের পরিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের এমএসভিপির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার হরিহরপাড়ার পদ্মনাভপুরের হাবিবা বিবি (৩০) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মৃতার স্বামী হামজাল হোসেন বলেন, ‘‘এ দিন সকালে আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। সে সময় জরুরি বিভাগে চিকিৎসক তাঁকে দেখেন। তার পরে আর দেখেননি। ফলে ভর্তির চার ঘণ্টা পরে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।’’

হামজালের দাবি, ‘‘বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।’’ যদিও হাসপাতালে ওই ওয়ার্ডের কর্মরত চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই মহিলা জন্ডিস নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে ভর্তি হয়েছিলেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয়। হাসপাতালের এমএসভিপি বলেন, ‘‘বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বলে কোনও অভিযোগ পাইনি।’’

NRS Hospital Murshidabad Medical College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy