বছর চোদ্দোর মেয়েটি মা, বাবাকে হারিয়েছে অনেক দিনই। ভাঙড়ে ঠাকুমার কাছেই সে থাকত। বাড়িতে লুকিয়ে সদ্য তরুণী এক ‘দিদি’ তথা বন্ধুর সঙ্গে মুর্শিদাবাদে বেড়াতে গিয়ে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মেয়েটি মারা গিয়েছে। লালবাগের কাছে তাকে কীটনাশক গোছের কিছু খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মেয়েটি। পুলিশ জানায়, খুনের অভিযোগে বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা ১৮ বছরের এক তরুণীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তরুণীর সঙ্গে মৃত নাবালিকার পরিচয় সমাজমাধ্যমে। নাবালিকার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর খোঁজ নেই। মোবাইলের গতিবিধি জরিপ করে এবং কিছু সূত্র কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তকে খুঁজছে পুলিশ।
রহস্যজনক পরিস্থিতিতে ভাঙড়ের কিশোরীর মৃত্যু হলেও এর পিছনে পাচার চক্র বা কোনও সংগঠিত অপরাধ চক্রের ভূমিকা থাকার বিষয়টি পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস রবিবার ভাঙড়ে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে তার পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন। তুলিকা বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। পুলিশকে বলেছি, দ্রুত নাবালিকার বান্ধবী তথা অভিযুক্ত তরুণীকে খুঁজে বার করতে হবে। শোকার্ত পরিবারটিকে সব রকম আইনি সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিও আমরা দেখছি।’’ নাবালিকার মামার লিখিত অভিযোগ, তাঁর ভাগ্নিকে দেহব্যবসায় নামানোর চেষ্টা চলছিল বলে তাঁরা মনে করছেন। ভাঙড়ের কিশোরী ঘটকপুকুরে এক বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে অভিযুক্তের সঙ্গে বেরোয় বলে জানা গিয়েছে। গত ১১ অক্টোবর মুর্শিদাবাদে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ১২ অক্টোবর তাকে কলকাতার এন আর এসে ভর্তি করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নাবালিকার মামা এ দিন ফোনে দাবি করেন, ‘‘আমার ভাগ্নির সঙ্গে অভিযুক্তের ফোনে পরিচয় হয়েছিল। ফোনেই আমার ভাগ্নিকে ওই মহিলা হাজারদুয়ারিতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তার পরে ওরা দু’জনে মুর্শিদাবাদে যায়। সেখানে গিয়ে অভিযুক্ত আমার ভাগ্নিকে একটি ছেলেকে বিয়ে করার কথা বলে। ভাগ্নি রাজি না হলে ওরা তাকে জোর করে বিষ খাইয়ে দেয়।’’ তিনি আরও জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা অসুস্থ কিশোরীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে পরে সেখান থেকে তাকে কলকাতার এন আর এস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ওই কিশোরী মারা যাওয়ায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)