Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নবদ্বীপ আদালতে ভুল স্বীকার সাক্ষীর

সজল ঘোষ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির হলেন তদন্তকারি অফিসার বিভাস সেন। আইনজীবীদের প্রশ্নের উত্তরে কার্যত স্বীকারও করে নিলেন নথিতে ভুল সময় লিখেছিলেন তিনি। বুধবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে ওই মামলার শুনানি ছিল। এর আগে পরপর দু’দিন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্যদানে গরহাজির ছিলেন বিভাসবাবু।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

সজল ঘোষ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির হলেন তদন্তকারি অফিসার বিভাস সেন। আইনজীবীদের প্রশ্নের উত্তরে কার্যত স্বীকারও করে নিলেন নথিতে ভুল সময় লিখেছিলেন তিনি।

বুধবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত এবং সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে ওই মামলার শুনানি ছিল। এর আগে পরপর দু’দিন অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্যদানে গরহাজির ছিলেন বিভাসবাবু। এ দিন তিনি ছাড়াও সাক্ষ্য দেন তৎকালীন নবদ্বীপ থানার আইসি শঙ্কর কুমার রায়চৌধুরী।

বুধবার শুনানির শুরুতেই সরকার পক্ষের আইনজীবী তথা নদিয়ার অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় শঙ্কর কুমার রায়চৌধুরীর কাছে জানতে চান, তিনি এখন কোথায় কর্মরত। শঙ্করবাবু জানান, তিনি এখন হাওড়া কমিশনারেটে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ পদে কর্মরত। এরপরে বিকাশবাবু তাঁকে একটি এফআইআর দেখিয়ে জানতে চান সেটি সজল ঘোষ হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা এফআইআর কি না। সাক্ষী এফআইআরটি সনাক্ত করেন। সঙ্গে জানান, ঘটনার রাতে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালেই এফআইআর নিয়েছিলেন তিনি এবং সঙ্গে সঙ্গে তা নবদ্বীপ থানায় নথিভুক্ত করার জন্য পাঠিয়ে দেন। বিভাস সেনকে ওই কেসের তদন্তকারি অফিসার হিসেবে নিয়োগ করেন ওইখান থেকেই।

এরপরে অভিযুক্তের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায় বলেন, এফআইআরে দেখা যাচ্ছে সাক্ষী প্রথমে পূর্বস্থলী লিখে পরে কেটে নবদ্বীপ করেছেন। জানতে চাওয়া হয়, কবে, কখন, কার কথায় তিনি এফআইআরে পেন দিয়ে কাটাকুটি করেন। সাক্ষী বলেন, ভুল করে এফআইআর নবদ্বীপের জায়গায় পূর্বস্থলী লেখা হয়েছিল। প্রতিমবাবু দাবি করেন, সাক্ষী ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই কাটাকুটি করেছিলেন। সাক্ষী বলেন, এ কথা সত্যি নয়। এরপরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আরেক আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা। শঙ্করবাবু ওই রাতে কেন নবদ্বীপ হাসপাতালে গিয়েছিলেন তা জানতে চান তিনি। সাক্ষী বলেন, ওখানে একটা গোলমালের খবর পেয়ে গিয়েছিলেন। একের পর এক প্রশ্ন করা হয়, কে ওই গোলমালের খবর দিয়েছিল, কতক্ষণ তিনি হাসপাতালে ছিলেন, পূর্বস্থলীর বিধায়কের সঙ্গে রাতে দেখা হয়েছিল কি না। বেশিরভাগের উত্তরেই সাক্ষী বলেন, জিডি না দেখে বলতে পারবেন না, কিংবা মনে নেই।

এরপরে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয় বিভাস সেনকে। তাঁকে যাবতীয় প্রশ্ন করেন সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, সাক্ষী প্রদীপ সাহাকে ৩.১৫ মিনিটে গ্রেফতার করেছিলেন কি না। সাক্ষী বলেন, হ্যা।ঁ বিকাশবাবু বলেন, ওই মামলায় আদালতে একটি জিডি পেশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ০৯/০১/১২ তারিখ সাক্ষী প্রদীপ সাহা এবং সন্তু ভৌমিক দু’জন অভিযুক্তকে ‘সেফ কাস্টডিতে’ রাখার জন্য ২.১৫ নাগাদ ধুবুলিয়া থানায় গিয়েছিলেন। সাক্ষী সম্মতি জানান। জিডি কে লিখেছিলেন জানতে চাওয়া হলে সাক্ষী বলেন, ওই থানার ডিউটি অফিসার লিখেছিলেন। ফের অভিযুক্তদের কখন, কোথা থেকে ধরা হয় জানতে চান বিকাশবাবু। তদন্তকারী অফিসার জানান, গ্রেফতারের সময়টি হবে রাত ১.১৫ মিনিট। লিখতে ভুল হয়েছিল। পরের প্রশ্ন, মামলার নথিতে দেখা যাচ্ছে ওই রাতে ২.১৫ মিনিটে আপনি নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সৌভিক আইচ এবং হালিম শেখকে জেরা করেছেন। একই সময়ে দুটো কাজ কীভাবে করলেন? বিভাসবাবু ঘাবড়ে গিয়ে জানান, সময় লিখতে ভুল হয়েছে। আসলে তিনি সেদিন খুব ‘পাজলড’ হয়ে পড়েছিলেন। আদালতও জানতে চায় কেন তিনি ‘পাজলড’ হয়েছিলেন। সাক্ষী বলেন, ওই রাতে হাসপাতালের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি ‘পাজলড’ হয়ে গিয়েছিলেন।

শুনানির শেষে সরকারি কৌঁসুলির তরফে আদালতে একটি আবেদন পেশ করা হয়। তাতে বলা হয়, শুনানিতে ধুবুলিয়া থানার যে জিডির কথা উঠে এসেছে (জিডি নম্বর ৩৭১/ ধুবুলিয়া পি এস কেস নং ০৯-০১-১২) সেটির লেখককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনীয়। অভিযুক্তের আইনজীবীরা এতে কোনও আপত্তি জানাননি। পরে বিচারকও ওই জিডির লেখককে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান।

এ দিন নিহত সজল ঘোষের স্ত্রীর তরফেও আদালতে একটি আবেদন করা হয়। সেখানে হত্যা মামলার পুনরায় তদন্ত করার দাবি তোলা হয়। বিচারক অবশ্য আবেদনটি নাকচ করে দেন। খারিজ করে দেওয়া হয় উচ্চ আদালতে যেতে চাওয়ার আবেদনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE