Advertisement
E-Paper

তদন্তে গাফিলতিই যেন নিয়ম

‘পুলিশের গাফিলতি যেন ট্র্যাডিশনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে’— কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহার খুনের মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে এমনই মন্তব্য করলেন কাটোয়া আদালতের এক প্রবীণ আইনজীবী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫১

‘পুলিশের গাফিলতি যেন ট্র্যাডিশনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে’— কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহার খুনের মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে এমনই মন্তব্য করলেন কাটোয়া আদালতের এক প্রবীণ আইনজীবী। বুধবার রায় শুনে কাঁর বক্তব্য, ‘‘সঠিক তদন্ত হচ্ছে না বলে একের পর এক ঘটনায় অপরাধীরা সাজা পাচ্ছেন না। আর পুলিশের গাফিলতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আদালত।”

সাম্প্রতিক কালে কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে পরপর বেশ কিছু সাড়া জাগানো ঘটনায় উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে দোষীদের চিহ্নিত করতে পারেনি আদালত। যার মানে দাঁড়ায়, ওই সব ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি, ব্যর্থতার জন্যই অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছেন। নয় তো প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে আদালতের কাঠগড়া পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেনি পুলিশ। ফলে, সুবিচার না পেয়ে কেউ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তো কেউ ঘরেই গুমরে পড়ে রয়েছেন।

বর্ধমান জেলা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তকারী অফিসারদের গাফিলতি থাকে না সেটা বলছি না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বদলি হওয়ার জন্য একটি ঘটনার তদন্ত করছেন তিন-চার জন অফিসার। তাতে চার্জশিটে মূল ঘটনার ফোকাস হারিয়ে যায়। আবার কেস ডায়েরিতেও তদন্তের গতিপ্রকৃতি পাল্টে যায়।’’ এ ছাড়াও ফরেন্সিক পরীক্ষা বা এফএসএল রিপোর্টও সঠিক সময়ে আদালতে জমা না পড়ায় বিচারকের কাছে প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট হয় না বলে তাঁর দাবি।

আইনজীবীরা জানান, কেতুগ্রাম ধর্ষণ মামলায় ঘটনার প্রায় দেড় বছর পরে মূল অভিযুক্তের বীর্যের নমুনার রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়। তাতেও স্পষ্ট কোনও মতামত দিতে পারেনি বেলগাছিয়া ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির অধিকর্তারা। সামনে আসে পুলিশের একাধিক গাফিলতি। কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক তার রায়েও পুলিশের একাধিক গাফিলতির কথা তুলে ধরেন।

কেতুগ্রাম ধর্ষণের ঠিক তিন মাস আগে খুন হন তৃণমূলের কেতুগ্রাম ১ ব্লক সাধারণ সম্পাদক কৃপাসিন্ধু সাহা। এলাকা দখলের রাজনীতির জন্য দলেরই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে এই খুন বলে জানা যায়। বুধবার এই মামলার রায়েও বিচারক প্রতি ছত্রে পুলিশের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। রায় অনুযায়ী, ওই মামলায় কার্যত পুলিশ তদন্তই করেনি। গুলি করে খুন করা হলেও পুলিশ অস্ত্রটাই উদ্ধার করতে পারেনি! কার্তুজ মিললেও তার কোনও ব্যালিস্টিক রিপোর্ট করানো হয়নি। সমসাময়িক আর একটি খুনের মামলাতেও কেতুগ্রামের পুলিশের ব্যর্থতায় অভিযুক্তরা বেকসুর হয়ে গিয়েছেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুর্শিদাবাদের সালারের পিলখুন্ডি গ্রামের বাসিন্দা রাজা শেখ খুন হন। তাঁকে দুষ্কৃতীরা তাড়া করে বর্ধমান এলাকার বহড়ান স্টেশনের কাছে প্রকাশ্যে খুন করে। স্থানীয় মানুষজন আট দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাঁদের কাছ থেকে একটি মেশিনগানও মেলে। সম্প্রতি এই মামলাতেও কাটোয়া আদালতের দায়রা বিচারক সব অভিযুক্তকেই বেকসুর করে দিয়েছেন। বিচারক রায়ে জানিয়েছিলেন, এই খুনের পিছনে সঠিক প্রমাণ্য দিতে পারেনি পুলিশ। ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষ থাকলেও, এক জনেরও সাক্ষ্য নেয়নি কেতুগ্রাম পুলিশ। এমনকী, ঘটনাস্থলের নমুনা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়নি। পেশ করা হয়নি এফএসএল রিপোর্টও।

এর আগে ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি মঙ্গলকোটের কৈচরে সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য শিশির চট্টোপাধ্যায় খুন হন। তাঁর মুন্ডু কেটে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি বাঁশের ডগায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আট জন অভিযুক্ত থাকলেও পুলিশ তদন্তের কিনারা করতে পারেনি। ফলে অভিযুক্তরা বেকসুর খাসাল পেয়ে যায়। এই মামলাতেও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিতে পারেনি পুলিশ। সেই সময় মঙ্গলকোটের পশ্চিম গোপালপুরে সিপিএম কর্মী এককড়ি মুখোপাধ্যায় খুন হনন। সেখানেও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কোনও নমুনা সংগ্রহ করেনি।

কাটোয়া আদালতের অন্যতম সরকারি আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের ছোট ছোট ভুলের জন্য মামলা ভেস্তে যায়। এখন প্রতিটি ঘটনাতেই ফরেন্সিক রিপোর্ট একপ্রকার বাধ্যতামূলক। অথচ ওই রিপোর্ট পুলিশ করায় না। আবার করালেও এত দেরিতে রিপোর্ট আসে, ফলে চার্জশিট জমা দিতে দেরি হয়। তাতে বিচার প্রক্রিয়া দেরি হয়।” যদিও ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে কর্মী সংখ্যা কম থাকায় রিপোর্ট পেতে দেরি হয় বলে একাধিক পুলিশ কর্তার দাবি।

Negligence investigation police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy