Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
বেলডাঙায় বিস্ফোরণে জখম আরও দুই

সিলিন্ডার ছিটকে মৃত পড়শি বালক

এই দুর্ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী করছে বেআইনি ওই সিলিন্ডারকেই। যে সিলিন্ডারে তিন থেকে পাঁচ কিলোগ্রাম গ্যাস ভর্তি করা হয় খোলা বাজারে। ফলে এই গ্যাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।

সাজারুলের আত্মীয়। (ইনসেটে) ফেটে যাওয়া সিলিন্ডারের টুকরো। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

সাজারুলের আত্মীয়। (ইনসেটে) ফেটে যাওয়া সিলিন্ডারের টুকরো। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:৪৬
Share: Save:

আর পাঁচটা সকালের মতোই ‘ছোট গ্যাসে’ চা বসিয়েছিলেন টুনুফা বিবি। আচমকা বিকট আওয়াজ। জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান টুনুফা। সেই সময় বাড়ির পাশের নলকূপে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে জল নিতে এসেছিলেন সাইজা বিবি। সিলিন্ডারের টুকরো এসে লাগে সাইজা ও তাঁর ছেলে সাজারুল শেখের (৭)। বুধবার সকালে বেলডাঙার মহ্যমপুরের বাগানপাড়ার ওই ঘটনার পরে সাইজা ও সাজারুলকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মারা যায় সাজারুল।

এই দুর্ঘটনার জন্য পুলিশ দায়ী করছে বেআইনি ওই সিলিন্ডারকেই। যে সিলিন্ডারে তিন থেকে পাঁচ কিলোগ্রাম গ্যাস ভর্তি করা হয় খোলা বাজারে। ফলে এই গ্যাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। তা হলে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না কেন? বেলডাঙার ওসি সমিত তালুকদারের দাবি, ‘‘বেআইনি এই গ্যাসের কারবারের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বেশ কিছু সিলিন্ডারও।’’

তবে পুলিশের সেই দাবি মানতে নারাজ মহ্যমপুর। গ্রামের লোকজনের পাল্টা দাবি, ‘‘কই, আমাদের গাঁয়ে অনেকেই তো এই ছোট সিলিন্ডার ব্যবহার করে। সে ব্যাপারে পুলিশকে তো কোনও দিন কিছু করতে দেখিনি।’’ তাঁদের আক্ষেপ, এটা যদি বেআইনিই হয়, তা হলে পুলিশ-প্রশাসনের এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। সেটা করলে এ ভাবে ওই বাচ্চাকে চলে যেতে হত না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাড়ার কলে রোজই জল নিতে আসেন সাইজা। এ দিন ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি লোহার টুকরো তিরের বেগে ছিটকে এসে লাগে সাইজা ও সাজারুলের গায়ে। দু’জনেই ছিটকে পড়েন। আরও যাঁরা জল নিতে আসছিলেন, তাঁরাও এমন দৃশ্যে প্রথমে চমকে যান। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও বোমা ফাটল। পরে জানতে পারি টুনাফাদের বাড়ির সিলিন্ডার ফেটেই এমন কাণ্ড!’’

ঘটনার পর থেকেই টুনুফার বাড়ির লোকজন। টুনুফার কথায়, ‘‘ওই গ্যাসেই তো রোজ সকালে চা করি। এ দিনও তাই করছিলাম। গ্যাসের সুইচ অন করে আগুন ধরাতেই দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ভয় পেয়ে পা দিয়ে সরিয়ে দিই। তখনও আগুন নেভেনি। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। তার পরেই তো এমন ঘটনা। কী করে এমনটা হল বুঝতে পারছি না।’’

এ দিকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাইজা বিবির কথা বলার মতোও ক্ষমতা নেই। সাইজার স্বামী লুৎফার রহমান বলছেন, ‘‘পড়শির বাড়িতে সিলিন্ডার ফাটল! আর আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’ স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ছোট সিলিন্ডারের বেশ কদর রয়েছে গাঁ-গঞ্জে। স্টোভের বিকল্প হিসেবে এই ছোট সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এই গ্যাসের দাম প্রতি কিলোগ্রাম সত্তর টাকা। উৎসব-পরবের মুখে তা একশো টাকারও বেশি দামে বিকোয়। তবে গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কম টাকায় পেতাম বলে ওই গ্যাস ব্যবহার করতাম। কিন্তু আর নয়। এমন মারণ-ব্যবস্থা বাড়িতে আর রাখব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Cylinder Illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE