Advertisement
০২ মে ২০২৪

মা-ই তো বালিকা, শিশু বাঁচে কী করে

ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে... মেয়ে ঠিক মতো জানেই না ‘বিয়ে’ কাকে বলে, কাঁচা আম পেড়ে খায়, মেয়ে এখনও গোছের উপরে ডুরে শাড়ি তুলে এক্কা-দোক্কা খেলে...।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে... মেয়ে ঠিক মতো জানেই না ‘বিয়ে’ কাকে বলে, কাঁচা আম পেড়ে খায়, মেয়ে এখনও গোছের উপরে ডুরে শাড়ি তুলে এক্কা-দোক্কা খেলে...।

বাংলার এই সব মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে, হেঁশেল ঠেলা, অপরিণত শরীরে গর্ভধারণ, প্রসব ও মৃত্যু থেকে বাঁচাতে অনেক দিন আগেই লড়াইটা লড়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সে লড়াই যে একেবারে বৃথা গিয়েছে তা নয়, গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে তবু রয়ে গিয়েছে বাল্যবিবাহের অভিশাপ।

অল্পস্বল্প নয়, অনেকটাই।

কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে পড়াশোনা করালে কন্যাশ্রী প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে সরকার। নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে প্রচার চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু তার পরেও নদিয়া জেলায় অন্তঃসত্ত্বাদের ২৭ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। এমনকী ১৩-১৪ বছরের মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যাটা একই— ২৭ শতাংশ। যা বিশ্বাস করতে নারাজ স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সমাজকর্মীদের অনেকেই। কেননা ২০০৯-১০ সালেও এই জেলার ৪৫ শতাংশ প্রসূতি ছিল নাবালিকা। মাত্র পাঁচ-ছ’বছরের মধ্যে পরিস্থিতি এতখানি শুধরে যাওয়ার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই।

মুর্শিদাবাদ জেলার মহকুমাগুলোয় নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে বেশি। যেমন জঙ্গিপুরে ৪২ শতাংশ, ডোমকলে ৩২ শতাংশ, লালবাগ মহকুমায় ২৬ শতাংশ ও কান্দিতে ২৪ শতাংশ।

দুই জেলার বিভিন্ন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, প্রসূতির কাছে বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চাওয়ার কোনও নিয়ম নেই। মুখের কথাতেই বিশ্বাস করতে হয়। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই বয়স বাড়িয়ে বলে। তার ফলেও প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক শ্যামলকান্তি মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন আগের চেয়ে অনেক তৎপর। শিশু সুরক্ষা দফতরের কর্মীরাও পুলিশের সাহায্য নিয়ে অনেক সময়ে নাবালিকা বিয়ে আটকাচ্ছেন। মেয়ের বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না বলে অভিভাবকেরা মুচলেকাও দিচ্ছেন। কিন্তু পরে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা অন্যত্র নিয়ে গিয়ে চুপিসাড়ে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।’’

নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় জানান, নাবালিকা বিয়ে আটকাতে পুরোহিত বা আর যাঁরা বিয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত তাঁদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। নাকাশিপাড়ার পুরোহিত কল্যাণ সমিতি মাস তিনেক আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর নাবালিকার বিয়ে দেবে না। শ’দুয়েক পুরোহিত এই মর্মে অঙ্গীকার করেছেন।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ছাত্রীদের নিয়ে কন্যাশ্রী যোদ্ধা তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগও চলছে। আমাদের আশা, এতে কিছুটা হলেও কাজ হবে।’’

তথ্য সহায়তা: সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও শুভাশিস সৈয়দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New born babies Malnutrition Teenage mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE