Advertisement
E-Paper

তামাদি নোটেই প্রেমের খড়কুটো

প্রিয়জন শীতে কষ্ট পেলে কেমন লাগে? বুকের মধ্যে চিনচিন করে না? ‘‘তাই ওকে একটা লেপ কিনে দিয়েছিলাম’’ —রোদে পিঠ দিয়ে বসে লাজুক হেসে বলছিলেন সাগর মিত্র।

শিবনাথ মাইতি

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৫

প্রিয়জন শীতে কষ্ট পেলে কেমন লাগে? বুকের মধ্যে চিনচিন করে না?

‘‘তাই ওকে একটা লেপ কিনে দিয়েছিলাম’’ —রোদে পিঠ দিয়ে বসে লাজুক হেসে বলছিলেন সাগর মিত্র।

সময়টা এই রকমই। তবে সে বার হঠাৎ করে খুব শীত পড়েছিল। বাড়ি থেকে লেপ-কম্বল আনার সুযোগ পাননি রানিগঞ্জের মিতা। যাদবপুরে গবেষণার সুযোগ পেয়ে বাড়ি ছেড়ে সবে গাঙ্গুলিবাগানে মেসবাড়িতে উঠে এসেছেন। সেই গবেষণার সূত্রেই তাঁর সাগরের সঙ্গে পরিচয়।

সাগর বলে চলেন, ‘‘ফোনে ওর কষ্ট পাওয়ার কথা শুনে স্থির থাকতে পারিনি, জানেন! লেপ কিনে সটান হাজির হয়েছিলাম গাঙ্গুলিবাগানে।’’

কিন্তু তখনও তিনি কাঠ বেকার। মিতা জেরা করে দিলেন, লেপ কেনার টাকা কোথা থেকে এল? সাগর এটা-সেটা বানিয়ে বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনওটাই আর দাঁড়ায় না। জোর করেই হাতে পাঁচশোর একটা নোট গুজে দিয়েছিলেন মিতা।

সাগর টাকাটা খরচ করেননি।যত্নে ভাঁজ করে রেখে দিয়েছিলেন। ‘সেই দিনগুলোর কথা যাতে মনে পড়ে’— এই ভেবে। এমনও দিন গিয়েছে, মেসের খরচ জোগাতে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়েছে। তবুও টাকাটা খরচ করেননি। যদি সুদিন আসে, মিতার সঙ্গে ঘর বাঁধতে পারেন, সে দিন ওকে দেখাবেন ভেবেছিলেন।

সুদিন আসেনি। অন্যের হাত ধরে মিতা চলে গিয়েছেন সংসার করতে।

কিন্তু ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে।

৮ নভেম্বর রাতে পাঁচশো-হাজার টাকার নোট তামাদি হয়ে গিয়েছে। আর সাগর পড়েছেন বিষম দ্বিধায়। তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন, নোটটা আজীবন আগলে রাখবেন। এমন দিন যে আসতে পারে, ভাবেনইনি।

আর মাত্র ক’টা দিন বাকি। এখনই যদি সাগর নোটটা না বদলান, ক’দিন পরে সেটা নেহাত বাতিল কাগজ হয়ে যাবে। আবার যদি বদলেও ফেলেন, সেটা তখন নেহাতই টাকা। দিন যত ফুরোচ্ছে, দোনামনাটা বেড়েই চলেছে।

সেনায় কাজ করেন বাগুইআটির প্রশান্ত সাউ। বিয়ের পর ক’টা দিন বাড়িতে কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন সীমান্তে। বাড়ি ছাড়ার আগে একান্তে নতুন বৌয়ের হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন গোটা চারেক পাঁচশোর নোট। যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে, কিছু কিনতে মন চায়— এই ভেবে। টাকাটা প্রাণে ধরে খরচ করতে পারেননি শর্মিষ্ঠা।

তার পরে দু’টো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। প্রশান্ত আরও কত বার বাড়ি এসেছেন, ডিউটি ফিরেছেন। টাকাও দিয়ে গিয়েছেন প্রতি বার। কিন্তু প্রথম বারের কথাই আলাদা। ‘‘ঝগড়াঝাঁটিও তো কত হয় আমাদের। কিন্তু লোকটা বাড়়ি থাকে না তো। এক-এক দিন খুব মনকেমন করে। তখন নোটগুলো বের করে দেখি।’’

এ বার কী হবে?

‘তাই তো!’’— ভ্যাবাচ্যাকা মুখ করে তাকিয়ে থাকেন শর্মিষ্ঠা। উত্তর যে তাঁরও জানা নেই, বলাই বাহুল্য।

ইউনিভার্সিটির দিনগুলো যখন শেষমেশ ফুরিয়েই এল, সুজিত আর সুজাতা এক দিন ঠিক করলেন, রেস্তোরাঁয় খেতে যাবেন। গোল বাধল বিল মেটাতে গিয়ে। কেউই অন্যকে বিল মেটাতে দেবেন না। শেষে ঠিক হল, বিল ভাগাভাগি হবে। সুজিতের থেকে একটা পাঁচশোর নোট নিয়ে খুচরো ফেরত দিয়েছিলেন সুজাতা।

বছর তিনেক পরের কথা।

ইতিমধ্যে বিয়ে হয়েছে দু’জনের। কাকদ্বীপে সুজিতদের বাড়িতে বসে আড্ডা চলছে। বিয়ের আগে কে কাকে কী দিয়েছিল, তা নিয়েই দু’জনের তুমুল খুনসুটি। হঠাৎই সুজাতা বের করে আনলেন একটা কৌটো, তার ভিতরে সেই সবুজ নোট!

এ বার কী হবে?

সুজিতের পরামর্শ, ‘‘ব্যাঙ্কে গিয়ে বদলেই ফেলো। এখন তো সশরীরে আমিই হাজির আছি। আমার স্মৃতি আগলে রেখে আর কী হবে?’’

‘‘তা কেন! ওই নোটে ধরা আছে একটা সময়ের গল্প। ও তো আমাদের প্রেমের সাক্ষী’’— কাতর গলায় সওয়াল করছেন সুজাতা।

এঁদের ‘মন কি বাত’ কি কেউ শুনতে পেলেন?

Married couple Old Notes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy