ঈশ্বরচন্দ্র ইনস্টিটিউশন
১৯১৬ সালের ২১ জুলাই গোরাবাজার ঈশ্বরচন্দ্র ইনস্টিউশনের প্রতিষ্ঠা হয়। ২০ জন ছাত্র নিয়ে স্কুলের পথ চলা শুরু। বর্তমানে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৭০০। গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ধারাবাহিক ভাবে সাফল্যের নজির গড়েছে স্কুল। ২০১৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফলের নিরিখে জেলা শিক্ষা দফতর এ জন্য বিশেষ ভাবে পুরস্কৃতও করে তাদের। গত ১০ বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের একটি ছাত্রও ফেল করেনি। ২০১৪ সালের মাধ্যমিকে জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ওই স্কুলের ছাত্র।
২০১৬ সালে মাধ্যমিকে ১৯৫ জনের মধ্যে ১৯৫ জনই পাশ করেছে। তার মধ্যে স্টার পেয়েছে ৩৫ জন ও প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ৮২ জন। সর্বোচ্চ নম্বর ৬৫২। ২০১৫ সালের মাধ্যমিকে ১৫৪ জনের মধ্যে ১৫৪ জনই পাশ করে। স্টার পায় ৪০ জন এবং প্রথম বিভাগ পায় ৮৫ জন। সর্বোচ্চ ৬৬২ নম্বর। ২০১৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২১৮ জনের মধ্যে ২১৮ জন পাশ করে। স্টার পেয়েছে ৩২ জন, প্রথম বিভাগ পেয়েছে ৭৯ জন। ৬৬৩ নম্বর পেয়ে সে বার জেলায় দ্বিতীয় স্থান পায়।
স্কুলের ধারাবাহিক সাফল্য প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। প্রয়োজনে তাঁদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। পুজো ও গরমের ছুটিতে বাড়তি ছাত্রদের নিয়ে ক্লাস করানো হয়। সেই সঙ্গে এমন ভাবে রুটিন তৈরি করা হয়েছে যাতে কোনও ক্লাস বাদ না যায়। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের সঠিক ভাবে ব্যবহার করা, গ্রন্থাগারের মান উন্নয়নের পাশাপাশি ছাত্রদের গ্রন্থাগারমুখী করে তোলা হয়েছে। অডিও-ভিস্যুয়াল ক্লাসও নেওয়া হয় নিয়মিত।’’
লিপিকা মেমোরিয়াল
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠার সময় স্কুলের নাম ছিল বহরমপুর জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল এবং ক্লাস হত জেএন অ্যাকেডেমি স্কুলের প্রাতঃবিভাগে। পরে ১৯৮৫ সালে বর্তমান জায়গায় ভবন গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৬ সালে স্কুলের নতুন নাম হয় লিপিকা মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল। ২০০৫ সালে স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। একাদশ শ্রেণিতে শুরুতে কলা বিভাগ পড়ানো হত। পরে কয়েক বছর আগে বিজ্ঞান বিভাগও চালু হয়েছে। রয়েছে বৃত্তিমূলক শাখাও।
প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী বিশ্বাস জানান, স্কুলের সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে শিক্ষিকাদের। একটা পরিবারের মতো স্কুলে থাকি। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সময় মতো পরীক্ষা নেওয়া, সঠিক ভাবে খাতার মূল্যায়ন করা, সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ করার ফলে ছাত্রীদেরও সুবিধে হয়। তবে নিয়মিত অভিভাবক সভা করার ফলে শিক্ষিকাদের সঙ্গে অভিভাবকদের একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে ছাত্রীদের সুবিধে-অসুবিধে বুঝতে পারেন তাঁরা।
স্কুলের গত দু’বছর ধরে মাধ্যমিকে এক জনও ফেল করেনি। গত চার বছর ধরে ৯০ শতাংশের বেশি ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করেছে। ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে ১০৩ জনের মধ্যে ১০৩ পাশ করে। সর্বোচ্চ নম্বর ওঠে ৬১৭। ২০১৬ সালের মাধ্যমিকে ৭৮ জনের মধ্যে ৭৮ জনই পাশ করে। সর্বোচ্চ নম্বর হয়েছে ৬৫৮।
পঠনপাঠনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চাও এগিয়ে ছাত্রীরা। ২০১৫ সালে সরকারি উদ্যোগে কলা উৎসব হয়। সেখানে যোগ দিয়ে জেলা স্তরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে স্কুলের এক ছাত্রী। ওই বছরই ব্লক স্তরে ইউথ পার্লামেন্ট প্রতিযোগিতায় বহরমপুর ব্লকের সেরা দল হিসেবে ঘোষণা করা হয় ওই স্কুলকে। একই ভাবে ২০১৫ সালে বৃত্তিমূলক শাখায় বিজনেস অ্যান্ড কর্মাসে রাজ্যে প্রথম স্থান পায় ওই স্কুলের ছাত্রী।
চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন
পঞ্চম শ্রেণিতে ১০ জন ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ১৯৬৪ সালে পথ চলা শুরু হয় এই স্কুলের। শুরুতেই ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হলেও দ্রুত সরকারি অনুমোদন পেতে ছাত্রদের বাদ দিয়ে ছাত্রীদের নিয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়। বর্তমানে সেই চুঁয়াপুর বিদ্যানিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। দু’টি শ্রেণিকক্ষ থেকে উত্তরণ ঘটেছে তিন তলা সুবিশাল ভবনে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী সেন জানান, রুটিন এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে ছাত্রীরা সহজেই সিলেবাস শেষ করতে পারে। স্কুলে আসার জন্য উৎসাহ যোগাতে পুরস্কারও চালু করা হয়েছে। এ ছাড়াও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হয়। পরীক্ষার খাতা বাড়িতে দেখানোর জন্য পাঠানো হয়। অভিভাবকদের বলে দেওয়া হয়, খাতা দেখে তাঁদের কোনও পরামর্শ থাকলে জানাতে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সবকিছুরই মিলিত ফল হল ওই সাফল্য।’’
গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্য পেয়েছে ওই স্কুল। যেমন ২০১৩ সালে ৮১ জনের মধ্যে ৮১ জন পাশ করেছে। তার মধ্যে প্রথম বিভাগে ১৩ জন। সর্বোচ্চ নম্বর ছিল ৬৪১। ২০১৪ সালে ১১০ জনের মধ্যে ১১০ পাশ করে। তার মধ্যে ১৯ জন প্রথম বিভাগে এবং সর্বোচ্চ নম্বর ওঠে ৬১৫। ২০১৫ সালে ৮১ জনের মধ্যে ৮১ জন পাশ করে। প্রথম বিভাগে ২৭ জন এবং সর্বোচ্চ নম্বর ছিল ৬৪৫। ২০১৬ সালে ১১৫ জনের মধ্যে ১১৫ জনই পাশ করে। তার মধ্যে প্রথম বিভাগে ১৬ জন এবং ৬৬৬ নম্বর পেয়ে জেলায় মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হয় ওই স্কুলের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায়ও এগিয়ে ছাত্রীরা।
ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুল
১৯৬৫ সালে স্কুলটি তৈরি হয়েছিল ব্যারাজের কর্মী পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য। ব্যারাজের কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্র ছাত্রীই এখন আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে আসে। ২০১৪ সালে ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করে ৮৫ জন, ২০১৫ সালে ৯৩ জনের মধ্যে ৯৩ জন এবং ২০১৬ সালে ৯৭ জনের মধ্যে ৯৭ জনই পাশ করে। গত তিন বছরে সর্বোচ্চ নম্বর ছিল যথাক্রমে ৬৪৯, ৬১৭ ও ৬৪৭। এ বছর প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ৭০ জন এবং স্টার পেয়েছে ২৫ জন।
ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মনোজ কুমার পানি জানান, শিক্ষক সংখ্যা যাই থাকুক না কেন বাড়তি ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করতে হবে। কোনও শিক্ষকের অফ পিরিয়ড বলে কিছু নেই। এমনকী তিনিও প্রতিদিন চারটে ক্লাস নেন। শিক্ষকদের স্কুলে অনুপস্থিতির সংখ্যা কমানো, প্রতিটি ইউনিট পরীক্ষার শেষে খারাপ ফলের জন্য অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে সজাগ করা, পরীক্ষার খাতা দেখার মধ্যে যাতে দায়সারা ভাব না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়। সেই সঙ্গে স্কুলের ছুটি কমানোর দিকেও স্কুল কর্তৃপক্ষের নজর থাকে। যেমন গরমের ছুটি নিয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশ থাকলেও স্কুলের ক্লাস বন্ধ হয়নি। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে সকালে পঠন পাঠন চালানো হয়েছে। অধ্যক্ষ জানান, ভাল ফল তখনই সম্ভব যখন শিক্ষকেরা ভাল মন নিয়ে শিক্ষকতা করবেন। স্কুলের সাফল্যের চাবিকাঠি সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy