অনন্ত অপেক্ষা। রঘুনাথগঞ্জের একটি ডাকঘরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ছুটি পেরিয়ে মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক খুলতে উপচে পড়েছিল ভিড়। তা দেখে বাতিল নোট বদলাতে অনেকেই দৌড়োন ডাকঘরে। কিন্তু বেশির ভাগ ডাকঘরেই এ দিন নতুন নোট আসেনি। যা ছিল তা ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। ফলে বেশিরভাগ ডাকঘরে ঝাঁপ পড়ে। যাঁদের ম্যাচুইরিটির টাকা পাওয়ার কথা ছিল তাঁদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এ দিন।
রবিবারে ব্যাঙ্ক থেকে তবু কিছু টাকা মিলেছিল। তাই দিয়ে ঠেকানো গিয়েছে গ্রাহকদের। মঙ্গলবার সেটুকুও মেলেনি। ফলে বিপাকে জেলার ডাকঘরগুলি। ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়েও টাকা না মেলায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরাও।
মুর্শিদাবাদ তিনটি মুখ্য ডাকঘরের অধীনে রয়েছে ৫৭৮টি ডাকঘর। গ্রামীণ ডাকঘরগুলিতে টাকা নেই, তাই পেমেন্ট পুরোপুরি বন্ধ এক সপ্তাহ ধরে। শহর ও বড় গ্রামগুলিতে যে ৮০টি উপ-ডাকঘর রয়েছে, টাকা নেই সেগুলির কোথাও।
প্রতিদিন ডাকঘরগুলিতে জেলায় গড়ে ১০ কোটি টাকার উপর জমা পড়ে। এত দিন তবু লাখ পঞ্চাশ টাকা হাতে পাচ্ছিল ডাকঘরগুলি। সে টাকা দিয়েই কোনও রকমে দু’এক হাজার করে টাকা মেটানো হচ্ছিল গ্রাহকদের। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকে সে ভাঁড়ারও শূন্য।
রবিবার বহরমপুর ডাকঘর ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল ব্যাঙ্ক থেকে। মঙ্গলবার এক কোটি টাকা চেয়ে পাঠালেও কানাকড়ি মেলেনি।
রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার মিতা চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা জমা পড়ে ব্যাঙ্কে। তাঁরা ব্যাঙ্কের কাছে এক কোটি টাকা চেয়েছিলেন। মুখ্য ডাকঘরের অধীনে ২৬টি উপ-ডাকঘরে টাকা পাঠাতে হয়। রবিবার ৫ লক্ষ টাকা মেলে। মঙ্গলবার কোনও টাকা দেয়নি ব্যাঙ্ক। ফলে সমস্ত লেনদেন বন্ধ করে দিতে হয়।
ফরাক্কায় রবিবার চারটি ডাকঘরকে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার সেই পরিমাণ টাকাও আর দিতে রাজি হননি ফরাক্কার স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ডাকঘরগুলিতে বিরাট লাইনে গ্রাহকেরা অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু অনেকেকই ফিরতে হয় খালি হাতে।
নবারুণ ডাকঘরের পোস্টমাস্টার গোপাল সাহা বলেন, “বেলা ৩টে নাগাদ পোস্টাল সুপারের হস্তক্ষেপে ৭ লক্ষ টাকা মেলে। তাই ৪টি স্থানীয় ডাকঘরের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। টাকা বিলি করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।”
কমবেশি একই অবস্থা জেলা বাকি ডাকঘরগুলিতেও।
মুর্শিদাবাদ ডিভিসনের পোস্টাল সুপারিনটেনডেন্ট জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানান, ব্যাঙ্ক থেকে চাহিদা মতো টাকা মিলছে না। ফলে তাঁরা যেমন অসুবিধায় পড়ছেন, ভুগতে হচ্ছে গ্রাহকদেরও। ডাকঘরগুলিকে বলা হয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে হাতে টাকা পেলে পরিমাণে কম হলেও বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের যেন তা বিলি করা হয়।
তিনি জানান, মঙ্গলবার আরও সমস্যা হয় একাধিক ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি নির্দেশ বুঝতে ভুল করায়। এ নিয়ে দুপুরে ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়।
তিনিই উদ্যোগী হয়ে সব ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে নির্দেশ পাঠান ডাকঘরগুলিকে যত বেশি সম্ভব টাকা দেওয়ার জন্য। দুপুরের পরে জেলার কয়েকটি ডাকঘর টাকা হাতে পেলেও বেশির ভাগ ডাকঘরে তা পৌঁছয়নি।
বহরমপুরের একটি ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মানিক দে বলেন, “কোনও রকমে ম্যানেজ করে ৫০ হাজার টাকা ডাকঘরে নিয়ে আসি। ২০০০ টাকার সেই গ্রাহকদের দিয়ে কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy