E-Paper

‘একটা ঘর’, বিডিও-কে অনুনয় বৃদ্ধার

রানাঘাট ২ ব্লকের অধীনে থাকা নোকারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াগাছার বাসিন্দা গীতা। বছর তিরিশ আগে তাঁর স্বামী সয়ারাম বিশ্বাস মারা যান।

সুদেব দাস

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৯
বিডিও-র হাত ধরে অনুনয় বৃদ্ধার। রানাঘাটের নোকারিতে।

বিডিও-র হাত ধরে অনুনয় বৃদ্ধার। রানাঘাটের নোকারিতে। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্দিনের শুরু তিরিশ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেকে নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে তিন দশক কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি, বর্তমানে সত্তরোর্ধ্ব গীতা বিশ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগের রাতে প্রতিবেশীদের পাকা ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। সরকারি সুযোগ-সুবিধা বলতে নিজের বার্ধক্য ভাতা ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতাটুকু মেলে। "অনেকবার কাগজপত্র জমা দিয়েছি। বাবা আমাকে একটা পাকা ঘর দাও।"— সম্প্রতি বিডিও-কে সামনে চোখের জল মুছতে মুছতে এমনই অনুনয় করলেন তিনি।

রানাঘাট ২ ব্লকের অধীনে থাকা নোকারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াগাছার বাসিন্দা গীতা। বছর তিরিশ আগে তাঁর স্বামী সয়ারাম বিশ্বাস মারা যান। একমাত্র ছেলে মহাদেবকে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে আগলে রয়েছেন বৃদ্ধা। ছেলে আবার শারীরিক ভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। ভারী কোনও কাজ করতে পারেন না। বাড়িতে খান কয়েক হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করেন।

তাঁদের বাড়িটাকে কাঁচা বাড়ি বললেও বেশি বলা হয়। প্রতিবেশীদের ফেলে দেওয়া অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত কয়েকটি টিন আর ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে ঝুপড়ি তৈরি করে দিন কাটছে প্ৰত্যন্ত গ্রামের এই পরিবারের। সম্প্রতি গ্রামীণ এলাকায় আবাস প্রকল্পে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে গ্রামে গিয়েছিলেন রানাঘাট ২-এর বিডিও। তালিকা ধরে বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে প্রশাসনিক কর্তার চক্ষু চড়ক গাছ। জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে পাকা ঘরের জন্য একাধিক বার আবেদন নিবেদন করেছেন গীতা। কিন্তু লাল সুতোর ফাঁস কাটিয়ে মাথার ওপর কংক্রিটের ছাদ আর জোটেনি।

বিডিও-কে কাছে পেয়ে কাঁদতে শুরু করেন বৃদ্ধা। অনর্গল বলতে থাকেন তাঁদের দিনযাপনের যন্ত্রণার কথা। বিডিও শুভজিৎ জানা তাঁকে বলেন, "চিন্তা করবেন না ঠাকুমা। আপনি সরকারি প্রকল্পের ঘর পাবেন।" এই আশ্বাসে বৃদ্ধার কান্না থামে। তিনি চোখের জল মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। গীতা বলেন, "কোনও নেতা নয়। বিডিও নিজে বলে গিয়েছেন, ঘর মিলবে। এ বার হয়তো ঠাকুর মুখ তুলে চাইবেন।"

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন: বছরের পর বছর ঝুপড়ির দিন কাটলেও ২০১৬-২০২৪ সালের সরকারি প্রকল্পে ঘরের আশ্বাসটুকু পেতে কেন এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল? সদুত্তর মেলেনি। তবে রানাঘাট ২-এর বিডিও শুভজিৎ জানা বলেন, "দ্রুত যাতে বৃদ্ধার জন্য পাকা ঘরের ব্যবস্থা করা যায়, সেই চেষ্টাই করছি। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশ মতো মানবিকচার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়ার হচ্ছে।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Awas Yojana BDO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy