Advertisement
E-Paper

প্রতিবেশীদের ঝগড়া থামাতে এসে গুলিতে হত তরুণী, জখম দেড় বছরের শিশু!

প্রতিবেশীদের ঝগড়া থামাতে ছুটে আসাটাই কাল হল সরকার পরিবারের। গুলিতে খুন হয়ে গেলেন পরিবারের তরুণী বধূ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২০
রুমা সরকার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

রুমা সরকার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

প্রতিবেশীদের ঝগড়া থামাতে ছুটে আসাটাই কাল হল সরকার পরিবারের। গুলিতে খুন হয়ে গেলেন পরিবারের তরুণী বধূ। গুরুতর আহত তাঁর দেড় বছরের সন্তান। ঘটনার পর থেকেই হামলাকারীরা পলাতক। ক্ষুব্ধ জনতা এর পর হামলাকারীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। বহু ক্ষণ মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভও দেখায়। জুয়ার ঠেকে টাকার বখরা নিয়ে মস্তান দুই ভাইয়ের মারামারি থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।

ধুবুলিয়া যক্ষ্মা হাসপাতাল চত্বরে পুরনো কোয়ার্টারগুলি দখল করে এখনও বহু মানুষ বসবাস করেন। সেখানেই ৯ নম্বর ব্লকে পাশাপাশি ঘরে থাকতেন স্বদেশ বিশ্বাস ও গোবিন্দ সরকার। ওই আবাসনের উল্টোদিকে আর একটি আবাসনে থাকে স্বদেশের দাদা রাজু। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বদেশ ও রাজু এলাকার কুখ্যাত সমাজবিরোধী। হাসপাতালের ওই আবাসনের পাশেই প্রায় ১০ বছর ধরে জুয়ার বোর্ড চালায় স্বদেশ ও রাজু। একটি পরিত্যক্ত ঘরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সেই জুয়ার ঠেক বসে। রবিবার রাত এগারোটা নাগাদ জুয়ার বোর্ডের টাকার বখরা নিয়ে স্বদেশ ও রাজুর মধ্যে তুমুল গোলমাল শুরু হয়। মারামারি চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছলে দু’জনকে থামাতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁদের মধ্যে গোবিন্দ সরকার ও তাঁর স্ত্রী রুমা ছিলেন। রুমার কোলে ছিল দেড় বছরের শিশুপুত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঝগড়া চরমে উঠলে গোবিন্দ-সহ কয়েক জন স্বদেশকে ধরে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। সেই সময় দা নিয়ে তেড়ে আসে রাজু। তাকেও আটকানো হয়।

রণমূর্তি স্বদেশ আচমকা হাতে ধরা বন্দুকটি গোবিন্দ-র পেটে ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। সেই দৃশ্য দেখে গোবিন্দ-র মা ছুটে এসে স্বদেশের পা জড়়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন প্রতিবেশী এক মহিলা ওই ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন। তখন স্বদেশ পিছনের দরজা দিয়ে বাইকে চড়ে বেরিয়ে আসে আর তার ঠিক সামনে পড়ে যান রুমা। রাগে ফুঁসতে থাকা স্বদেশ কোনও কিছু না-ভেবে ছেলে কোলে দাঁড়িয়ে থাকা রুমার মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয়। সন্তানকে নিয়েই ছিটকে পড়েন রুমা। পড়ে গিয়ে কোলের শিশুর মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। শিশুটিকে তুলে পালিয়ে আসেন এক মহিলা। কিন্তু রুমাকে বাঁচানো যায়নি। প্রাণ যায় তাঁর।

এই ঘটনায় স্বদেশ বিশ্বাস ও তাঁর দাদা রাজু বিশ্বাস, রাজুর স্ত্রী নীলিমা ও ছেলে টুকাই-সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ টুকাই ও নীলিমা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত স্বদেশ ও তার দাদা রাজু এখনও পলাতক। ঘটনার জেরে এলাকা উত্তপ্ত। ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ স্বদেশ ও রাজুর ঘরে ভাঙচুর চালান। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে জুয়ার ঠেকে বন্ধক দেওয়া ছ’টি মোটরবাইক। খবর পেয়ে পুলিশ এলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত প্রায় সাড়ে চারটে পর্যন্ত মৃতদেহ আটকে রেখে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের মদতেই এত বছর জুয়ার বোর্ড চলছে।

নিহত রুমার স্বামী গোবিন্দ সরকারের অভিযোগ, “কেউ কিছু বলতে গেলে স্বদেশ উল্টে তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতো। স্বদেশ ডাকলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। অথচ কাল আমরা ফোন করার পর আসতেই

চাইছিল না।” এই বিষয়ে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলছেন, “অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। ডিএসপি (ডিএন্ডটি)কে তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

Woman Murder Miscreants Dhubulia Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy