Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাল্যবিয়ে রোধে পঞ্চায়েতে জোর

পুলিশ, প্রশাসনের লাগাতার প্রচার আছে। আছে কন্যাশ্রী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নজরদারিও। তার পরেও জেলায় বাল্যবিবাহের কমতি নেই। রাজ্যে এখনও বাল্যবিবাহে মুর্শিবাদের ঠাঁই বেশ উপরে। সেই সংখ্যাটাকে শূন্যে নামিয়ে আনতে ‘বাল্যবিবাহ মুক্ত’ জেলার পরিকল্পনা নিল প্রশাসন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

পুলিশ, প্রশাসনের লাগাতার প্রচার আছে। আছে কন্যাশ্রী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নজরদারিও। তার পরেও জেলায় বাল্যবিবাহের কমতি নেই। রাজ্যে এখনও বাল্যবিবাহে মুর্শিবাদের ঠাঁই বেশ উপরে। সেই সংখ্যাটাকে শূন্যে নামিয়ে আনতে ‘বাল্যবিবাহ মুক্ত’ জেলার পরিকল্পনা নিল প্রশাসন। আপাতত ২৬টি ব্লকের ২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বেছে নিয়ে এক বছরের মধ্যে সেই পঞ্চায়েতগুলিকে “বাল্য বিবাহ মুক্ত” করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

হরিহরপাড়ার রুকুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১২ সালে বিয়ের সংখ্যা ছিল ২৪৩টি। এর মধ্যে ২২১টি অর্থাৎ ৯১ শতাংশই ছিল বাল্যবিবাহ। পাশের খিদিরপুর পঞ্চায়েতে ২৮১টি বিয়ের মধ্যে ২৫৯টি অর্থাৎ ৯১ শতাংশ বিয়েই ছিল ১৮ বছরের আগে। বেলডাঙার দেবকুণ্ডুতে ৪০৮টির মধ্যে বাল্য বিবাহ ঘটেছিল ৫৮ শতাংশের অর্থাৎ ২৬১ জনের। বেগুনবাড়িতে একবছরে ৮৬৪টি বিয়ের মধ্যে ৪০৯টি বিয়েই ছিল বাল্য বিবাহ।

মুর্শিদাবাদের বাল্যবিবাহের এই চিত্রটি ফুটে উঠেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায়।

পাঁচ বছর পেরিয়ে ব্যাপক প্রচার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও কন্যাশ্রীদের নজরদারি এবং পুলিশ ও প্রশাসনের লাগাতার প্রচারে চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। কিন্তু বাল্যবিবাহে রাজ্যে মুর্শিদাবাদের ঠাঁই এখনও উপরের দিকে।

এই অবস্থাটাকে বদলাতে চাইছেন জেলা প্রশাসন। তাই জেলায় ২৬টি ব্লকের ২৬টি পিছিয়ে পড়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সেগুলিকে “বাল্য বিবাহ মুক্ত পঞ্চায়েত” হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা শাসক শমনজিত সেনগুপ্ত জানান, বাল্য বিবাহ মুর্শিদাবাদে এক বড় সমস্যা। তাই জেলাশাসকের নিজস্ব ভাবনা থেকেই নেওয়া হয়েছে এই পরিকল্পনা। শিশু সুরক্ষা কমিটিগুলিকে সক্রিয় করে পঞ্চায়েত, অঙ্গনওয়ারি কর্মী, শিক্ষক, আশা ও স্বাস্থ্যকর্মী সকলকে এক ছাতার তলায় এনে পঞ্চায়েত ভিত্তিক সামগ্রিক সুরক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেই এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব।

ইতিমধ্যেই বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতেই সচেতন ও আগ্রহ তৈরির সভাগুলি শেষ করা হয়েছে।

শমনজিৎ মনে করেন, এতে সাফল্য পেলে জেলার অন্য পঞ্চায়েতগুলির কাছে একে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা যাবে তাই নয়, রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও পথ দেখাতে পারবে মুর্শিদাবাদ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সংস্থার কো অর্ডিনেটর জয়ন্ত চৌধুরী বলছেন, “বাল্যবিবাহ রোধ মূল লক্ষ্য হলেও অনেক সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করার রাস্তাও এতে প্রশস্ত হবে। প্রতিটি গ্রাম, সংসদে বৈঠক হবে। নজরদার কমিটি হবে গ্রামে, পঞ্চায়েতে, স্কুলে, সংসদে। কার কার বাড়িতে ক’টি ছেলেমেয়ে, বয়স কত, তারা কী করছে তার তালিকা তৈরি থাকবে। তাতেই স্পষ্ট হবে কী সামাজিক অবস্থায় রয়েছে গ্রামটি।”

সমশেরগঞ্জের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সুপারভাইজর মির আবু হেনা বলছেন, “জেলায় বছরে ২১৬টি বিয়ে বন্ধ হয়েছে। মুচলেকা লেখানো হয়েছে। কিন্তু সুতি, সমশেরগঞ্জের মতো বহু গ্রামে বাইরে নিয়ে গিয়ে ফের নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে সে খবর আসছে না। সে ক্ষেত্রে “বাল্যবিবাহ মুক্ত পঞ্চায়েত” প্রকল্পে কাজের দায়বদ্ধতা বাড়বে।”

ফরাক্কায় ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেওয়া ১ পঞ্চায়েতকে এই প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রধান মুনমুন রায় বলছেন, “প্রায় সব গ্রামে বাল্য বিবাহ ঘটে। কিন্তু তা প্রতিরোধের বালাই নেই। কারণ স্বাস্থ্য, পঞ্চায়েত, স্কুল, শিশু সুরক্ষা কমিটি সব আছে। কিন্তু কার্যত সবই অচল। প্রশাসন ও পুলিশের নজরদারি নেই।’’

সমশেরগঞ্জের বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তী বলেন, “জেলায় যে ভাবে প্রচার চলছে তাতে কম বয়সে বিয়ে যে ক্ষতিকর ও আইন বিরুদ্ধ তা সকলেই জানেন। প্রতিবেশী দেখছেন বাল্য বিবাহ হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবাদের চেষ্টা নেই। জোট বেঁধে এটাই ফিরিয়ে আনতে চাইছে প্রশাসন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Marriage Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE