রঞ্জন ভট্টাচার্য।
ভয় বড় অদ্ভুত ভাবে আসে। প্রায় বিনা কারণে কখনও বা খুব স্বল্প ভয়ের কোনও কারণে। আর তখন অনেকেরই বুক ধড়ফড় করে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, হাত-পা ঝিমঝিম করে, মাথা ঘোরে, এমনকি দম বন্ধ হয়ে এখনই মারা যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে প্যানিক অ্যাটাক বলা হয়। এই প্যানিক অ্যাটাক যদি বারবার হতে থাকে, তা হলে আমরা বলি, প্যানিক ডিস-অর্ডার। বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়ায় এবং সেই আতঙ্ক দাবানলের মতো সকলের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে পড়ে ‘মাস অ্যাংজাইটি’ বা ‘মাস-ফোবিয়া’ তৈরি করে। এর ফলে আমাদের শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতিতে নর-অ্যাড্রিনালিন অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষরণ হতে থাকে। এটা হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, তেমনি শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও বেড়ে যায়। এই অবস্থায় সুস্থ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ওই ঘটনা ভিড়ের মধ্যে হলে ওই প্যানিক আরও বেড়ে যায়, যেমনটা বুধবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটেছে। সে দিন সকালে বহির্বিভাগের পাঁচ তলায় যখন ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমি ওই তলার ১২১ নম্বর ঘরে বসে রোগী দেখছিলাম। দেওয়ালের ফ্যানের পিছন দিক থেকে আচমকা একটা আগুনের ফুলকি দেখা দিয়েছিল এবং দ্রুত নিরাপত্তারক্ষীরা ওই আগুন নিভিয়েও ফেলেছিল। সেই অর্থে ঘটনাটি খুব সামান্য। কিন্তু আগুন লেগেছে বলে দ্রুত রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ ক্ষেত্রে আগুন লাগার পূর্বস্মৃতি কাজ করেছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার’—তার ফলে মানুষও ঘটনার সত্যাসত্য বিচার না করে দ্রুত পালাতে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটেছে।
মনস্তত্ব বিভাগের প্রধান, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy