চিকিৎসা: হাসপাতালে পার্বতী।
বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছিল মায়ের গায়ে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন বাবাও। পড়শিদের আর্তনাদে ঘর থেকে ছুটে আসেন ছেলেটি। বাঁশ দিয়ে বাবা-মাকে সরিয়ে দিলেও বিদ্যুতের তার জড়িয়ে যায় ছেলেটির গায়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তেহট্ট কালিতলাপাড়ার বাসিন্দা সমিত মিস্ত্রি (২১)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমিতের বাবা অনিলবাবু ও মা পার্বতীদেবী।
মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা ঘণ্টাখানেক করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। বিপাকে পড়েন বহু চালক ও যাত্রী। অবরোধকারী ও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গাফিলতিতেই এমন অঘটন। ঝড়-বৃষ্টিতে তেহট্ট এলাকার বহু তার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বার বার বলা সত্ত্বেও ওই সংস্থা থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পুলিশ এসে গাফিলতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়।
সমিতদের বাড়ির পাশ দিয়ে ২২০ ভোল্টের বিদ্যুতের তার গিয়েছে। তার নীচেই রয়েছে একটি ফুলের গাছ। এ দিন সকালে বাড়ি লাগোয়া সেই গাছে ফুল তুলতে গিয়েছিলেন সমিতের মা পার্বতীদেবী। সেই সময় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে তার গায়ে পড়ে। তাঁকে বাঁচাতে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সমিতের বাবা অনিলবাবুও। অত সকালে ঘুম ভাঙেনি সমিতের। পড়শিদের আর্তনাদে তিনি তড়ঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাঁশ দিয়ে কোনও মতে তিনি অনিলবাবু ও পার্বতীদেবীকে তার থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু নিজে জড়িয়ে পড়েন সেই তারে। পড়শিরা ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু সমিতকে বাঁচানো যায়নি।
সমিতের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পার্বতীদেবী ও অনিলবাবু। তাঁরা বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে ছেলেটা পড়া ছেড়ে কেরলে কাজে গেল। সেখান থেকে ফিরে কুয়োর পাত তৈরি করত। ওর আয়েই সংসারটা চলত। আমাদের বাঁচাতে গিয়ে ছেলেটাই চলে গেল।’’ সমিতের দাদু মধুসূদন পাল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লোকজনকে তারগুলো মেরামত করে দিলে এমন ঘটত না।
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের তারগুলো কখনও কখনও বেহাল হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ দফতরকে বার বার সে বিষয়ে নজর দিতেও বলা হয়। তার পরেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তেহট্ট ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার শ্যামলকুমার কর্মকারের দাবি, বিদ্যুতের তার ঠিক আছে কি না সে বিষয়ে সব সময় নজর রাখা হয়। ঝড়-বৃষ্টির সময়ে নজরদারি আরও বাড়ে। ঘটনার আগের রাতের ঝড়ে সম্ভবত তারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। ওই পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy