Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ব্রাত্য বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট, ক্ষুব্ধ নবদ্বীপ

মান্থলি টিকিট মেলে হাওড়া, শিয়ালদহ, কাটোয়া এবং কালনার। কম্পিউটার টিকিটের ব্যবস্থা নেই। নেই সতর্কতার বালাইও। ফলে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় যাত্রীরা প্রাণ হাতে করে লাইন পারাপার করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ  শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

প্ল্যাটফর্ম না মরণফাঁদ?

বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে একের পর এক দুর্ঘটনার পরে এমনই প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। প্ল্যাটফর্ম থেকে ইএমইউ কামরার মেঝের উচ্চতা পাক্কা ২৩ ইঞ্চি। এক মিনিটেরও কম সময়ে ওই উচ্চতা ডিঙিয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপত্তি ঘটে। অভিযোগ, ঘটনার পরে বেশ কিছু দিন হইচই চলে। তারপর সব থিতিয়ে যায়।

যাঁরা প্ল্যাটফর্মের উপরে পড়ছেন, তাঁরা জখম হচ্ছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ট্রেনে উঠতে গিয়ে রেললাইনে পড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন দু’জন। ৭ ডিসেম্বর ট্রেনে উঠতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ভিক্ষুকের। ১৭ ফেব্রুয়ারি স্রেফ বরাত জোরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন ফিরদৌসি বিবি। রবিবারেও কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছেন নবদ্বীপের এক মহিলা।

যাত্রীদের অভিযোগ, সকালের হাওড়াগামী লোকালে এমনিতেই ভিড় থাকে। তার মধ্যে হল্টের প্ল্যাটফর্ম অস্বাভাবিক নিচু হওয়ার কারণে প্রায়শই ট্রেনে উঠতে গিয়ে ধাক্কা খান নিত্যযাত্রীরা। ২০১৪ সালে মারাত্মক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে দু’জন মারা গিয়েছিলেন এখানে। তাতেও রেলের হুঁশ ফেরেনি।

প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হলেও এখানে হাতেগোনা কিছু স্টেশন ছাড়া টিকিট মেলে না। কাউন্টার সেই মান্ধাতা আমলের। দেশ জুড়ে সর্বত্র যখন মোবাইলে ই-টিকিটের রমরমা, বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে মেলে পুরানো পেপার টিকিট। তা-ও কেবল হাওড়া-কাটোয়া এবং শিয়ালদহ ভায়া নৈহাটি লাইনের স্টেশনগুলির। রিটার্ন টিকিট পাওয়া যায় কেবল মাত্র তিনটি স্টেশনের— হাওড়া, কাটোয়া এবং কালনা।

মান্থলি টিকিট মেলে হাওড়া, শিয়ালদহ, কাটোয়া এবং কালনার। কম্পিউটার টিকিটের ব্যবস্থা নেই। নেই সতর্কতার বালাইও। ফলে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় যাত্রীরা প্রাণ হাতে করে লাইন পারাপার করেন। নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকেন রেলরক্ষীরা।

নিত্যযাত্রী সমিতির পক্ষে কাজল বসু জানান, কাটোয়ার পরে আর কোনও স্টেশনের টিকিট পাওয়া যায় না। অথচ কাটোয়ার পরে আজিমগঞ্জ, বাজারসৌ বা সালারে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। বর্ধমান মেন ও কর্ড, কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ, হাওড়া-খড়গপুর বা শিয়ালদহ শাখার সাউথ-নর্থ কোন শাখারই টিকিট মেলে না।

ক্ষুব্ধ নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলিপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “যাত্রী চলাচলের নিরিখে আর পাঁচটা হল্ট স্টেশনের সঙ্গে এর তুলনাই হয় না। উৎসবের সময়ে দৈনিক যেখানে লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়, সেই স্টেশন কেন পূর্ণাঙ্গ স্টেশনের মর্যাদা পাবে না?’’

নবদ্বীপ ধামের স্টেশন ম্যানেজার রতনলাল সরকারের আশ্বাস, ‘‘বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।” এমন আশ্বাসে অবশ্য ভরসা পাচ্ছে না নবদ্বীপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupriya Halt Nabadwip Train Passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE