Advertisement
E-Paper

গ্রামে বদল নেই, গ্রাম বদলাচ্ছেন বাসিন্দারা

ভোর হয় বোমার শব্দে, রক্তে ভিজে থাকে ধানখেত, দশকের পর দশক ডোমকলের কুচিয়ামোড়া আবার তার চেনা চেহারায় ফিরেছে। গ্রামের মানুষ তাই ভিটে গুটিয়ে অন্য ঠিকানার খোঁজ করছেন। দেখে এল আনন্দবাজার ভোর হয় বোমার শব্দে, রক্তে ভিজে থাকে ধানখেত, দশকের পর দশক ডোমকলের কুচিয়ামোড়া আবার তার চেনা চেহারায় ফিরেছে। গ্রামের মানুষ তাই ভিটে গুটিয়ে অন্য ঠিকানার খোঁজ করছেন। দেখে এল আনন্দবাজার 

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০২:০৪
পথ চেয়ে: ডোমকলের কুচিয়ামোড়ায়। —নিজস্ব চিত্র

পথ চেয়ে: ডোমকলের কুচিয়ামোড়ায়। —নিজস্ব চিত্র

তিন দশক ধরে চলছে বোমা-গুলির লড়াই। খুন, পাল্টা খুনের ধারবাহিকতা। তালিকায় শেষ সংযোজন ১৫ জুন এক সঙ্গে খুন হয় তিন গ্রামবাসী। ওই দিন ডোমকলের কুচিয়ামোড়ের ঘুম ভাঙে সেই চেনা বোমা-গুলির আওয়াজে।

নিরন্তর রক্তক্ষয়ী এই খুনের আবহে বীতশ্রদ্ধ কুচিয়ামোড়ার মানুষ এখন বিকল্প বসতের খোঁজ করছেন। কয়েক পুরুষের পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে কেউ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন, কেউ আবার ভিটে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে জমি-জায়গার খোঁজ শুরু করেছেন। কুচিয়ামোড়ার বাসিন্দা হাসিবুল আলম বলছেন, ‘‘ভিটেটুকু যদি জলের দরে বিক্রি হত, বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যেতাম। খাই না খাই রাত্রিটা তো নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারতাম।’’

ডোমকলের কুচিয়ামোড়ার কেবল হাসিবুল আলম নয়, বাপ-দাদাদের ভিটে-মাটি ফেলে চলে যেতে হবে বলে বেশ কয়েকটি পরিবার আডা়লে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া খুনের ঘটনার পরে কুচিয়ামোড়ার বাসিন্দাদের আক্ষেপ, ৩০ বছর ধরে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে একটা অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছি আমরা। গ্রাম যদি না বদলায়, তাহলে গ্রাম বদলে ফেলতে হবে আমাদেরই। ফলে নিজেদের ভিটে বদলানোর হিড়িক পড়েছে এখন।

নব্বইয়ের দশকে খুন আর খুনের বদলা শুরু হয়েছিল এলাকার বর্ধিষ্ণু গ্রাম কুচিয়ামোড়ায়। এক সময়ে খুনের পরে কাটা মুণ্ডু নিয়ে ফুটবল খেলা চলত। তা চলেছিল টানা দশ বছর। সেই সময়ে কুচিয়ামোড়ার অনেক পরিবার বদলে ফেলেছিলেন নিজেদের ঠিকানা। কেউ গড়াইমারি বা কাটাকোপরা, কেউ আবার ডোমকল বা বহরমপুরে পাকাপাকিভাবে শুরু করেন বসবাস করতে। তাদের ফেলে আসা সেই সব দালান বাড়িতে জন্মেছে আগাছা। পেরেক ঠোকা সেই উঁচু কাঠের দরজায় এখন ঘুণ। শুধু বর্ধিষ্ণু মানুষ নন, গ্রামের প্রান্তিক চাষিও এখন কুচিয়ামোড়া গ্রামে বাস করতে রাজি নন। গ্রামের তৈমুর ইমাম হাসানের দাবি, ‘‘কেবল নিজের নয়, কোলের শিশু ঘুমোতে পারছে না রাতে। আতঙ্ক গোটা গ্রামকে গ্রাস করেছে। ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ, গৃহশিক্ষকের দেখা নেই। প্রাণ খুলে যে গ্রামের রাস্তায় একটু ঘুরবো সে পরিবেশও উধাও হয়ে গিয়েছে। মাথা গোঁজার মতো একটু জায়গা কিনতে পারলেই গ্রাম ছাড়ব।’’

গ্রামের বাসিন্দা কুচিয়ামোড়া মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক মিরাজুল আলম বলছেন, ‘‘এক সময়ে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল কুচিয়ামোড়া। খেলাধুলা এবং সংস্কৃতিতে আর পাঁচটা গ্রামের থেকে এগিয়ে ছিল। নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চার জন্য তৈরি হয়েছিল স্থায়ী মঞ্চ। কিন্তু খুন এবং পাল্টা খুনের রাজনীতির বদল না হওয়ায় গ্রাম বদলের পথে হাঁটছে কুচিয়ামোড়া।’’ (চলবে)

নির্বাচনের আগে খুন হন গ্রামের তৃণমূল নেতা আলতাব শেখ। শনিবার গ্রামে খুন হয়েছে আরও তিন তৃণমূল কর্মী। জখম হয়েছেন আরো কয়েকজন। তবে এই খুনের ঘটনা কুচি আমার কাছে নতুন কিছু নয়, ঠিক তিরিশ বছর আগের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে ফলে গ্রামবাসীরা আবারও নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গ্রাম নিয়ে। অনেকেই ভাবছেন সেই নব্বই দশকের মত আবারো উজাড় হবে গ্রাম। শিক্ষিত মানুষ আবারও তাদের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবে অন্য কোথাও।

Domkal Crime Law and order
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy