Advertisement
E-Paper

ছাগল বেচে শৌচাগার

বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হত মাঠে। কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তাই শৌচালয় তৈরি করিয়েছেন রানিনগর ২ ব্লকের শিবনগরের সাবানা ইয়াসমিন।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১০

ওঁদের অনেকেরই ইচ্ছে আছে, সামর্থ্য নেই। কিন্তু সেই বাধা ওঁরা টপকে যাচ্ছেন।

বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হত মাঠে। কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তাই শৌচালয় তৈরি করিয়েছেন রানিনগর ২ ব্লকের শিবনগরের সাবানা ইয়াসমিন।

শুধু ইয়াসমিন নন। কেউ পোষা ছাগল বিক্রি করে, কেউ গাছ বিক্রি করে, কেউ ঋণ নিয়ে তৈরি করছেন শৌচালয়। আর এঁদের ঘাড়ে ভর দিয়ে ‘নির্মল জেলা’ তকমা পাওয়ার পথে গুটি-গুটি এগোচ্ছে মুর্শিদাবাদ।

জলঙ্গি থেকে ডোমকল, রানিনগর, থেকে বহরমপুর বা ভরতপুর— বহু জায়গাতেই একই চিত্র।

ডোমকলে মধুরকুল বণিকপাড়ার আলি হোসেন মণ্ডল রাজমিস্ত্রি। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। স্ত্রী মেরিনা বিবির জেদের মুখেই তিনি দু’টি পোষা ছাগল বিক্রি করেছেন। মেরিনার খেদ, “সরকার আমাদের শৌচালয় তৈরির টাকা দেয়নি।”

দৌলতাবাদের কালাম শেখের বাড়িতে মেটে শৌচালয় ছিল। আর্থিক সমস্যার কারণে তাঁরা শৌচালয় তৈরি করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী সরিফা বিবি স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে শৌচালয় তৈরি করছেন। সরিফা জানাচ্ছেন, “ আমরা গরীব, অথচ শৌচালয় তৈরির জন্য টাকা পাইনি। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে ঋণ নিয়ে শৌচালয় তৈরি করছি।” সরকারি টাকা পাননি বহরমপুরের ঘাসিপুরে হাবিবা বিবিও। শিশু গাছ বিক্রি করে তিনি শৌচালয় গড়েছেন। বহরমপুরে হাতিনগর এলাকার মুরারীপাড়ায় দু’টি বাড়িতে শৌচালয় গড়ার জমি ছিল না। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্করী মুরারী জানান, ওঁরা রান্নাঘরের এক ফালি জায়গায় শৌচালয় গড়েছেন।

ভরতপুর ২ ব্লকের টেয়া গ্রামের উৎপল মাঝি মেয়ে পরমা টেয়ার শান্তিসুধা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে সচেতনতা শিবির থেকে শুনে এসে সে বাবাকে চেপে ধরে। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে টানাটানির সংসার। শেষে ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি শৌচাগার তৈরি শুরু করেছেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রাপক ৯০০ টাকা দিলেই প্রশাসন ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে শৌচাগার গড়ার ব্যবস্থা করে। এঁদের মতো বহু মানুষ সেই টাকা পেলেন না কেন?

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৩-র মার্চে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানে বিপিএল পরিবারের পাশাপাশি এপিএল-এর ছ’টি গোত্রের পরিবারকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী জেলার প্রায় সাত লক্ষ পরিবার ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ওই তালিকায় বহু নাম বাদ পড়েছে।

জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “২০১৩ সালের সমীক্ষা অনুসারে যাঁরা ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না, তাঁরা শৌচালয় তৈরির জন্য অর্থ পাচ্ছেন না।”

জেলা প্রশাসনের দাবি, তা সত্ত্বেও তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ শতাংশেরও বেশি কাজ হয়ে গিয়েছে। পরে ফের সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তালিকার বাইরে প্রায় এক লক্ষ পরিবারের শৌচালয় নেই। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৬০ হাজার পরিবার নিজে থেকেই শৌচালয় তৈরি করেছে। বাকিরাও যাতে শৌচালয় তৈরি করে, সেবিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

জেলাশাসক নিজেই বলছেন, “কেউ ছাগল বিক্রি করে, কেউ ঋণ নিয়ে শৌচালয় গড়ছেন। জেলাকে নির্মল করতে এগিয়ে আসছেন।”

শৌচাগারের স্বপ্নে গরিবের ঘটি-বাটি যাচ্ছে। তাঁদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ‘নির্মল জেলা’ গড়ছেন কর্তারা!

(সহ প্রতিবেদন: কৌশিক সাহা)

Toilet Bathroom
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy