আজ ৩৪ দিন ধরে স্বামী সানারুল খান জেলে আটকে। লরি চালিয়ে দিন গুজরান ওর। পাথর বোঝাই করে লরি নিয়ে যাচ্ছিল। এপ্রিলের ২৫ তারিখ রাতে সাগরদিঘির রতনপুরের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে লরি দাঁড় করাতে বলে পুলিশ। স্বামীর অপরাধ, বুঝতে না পেরে দাঁড় করায়নি। তাড়া করে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। শুনলাম, ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় মামলা করে। আমি অত বুঝিনা বাবা! তবে এই মাসাধিক কাল ধরে আদালতে এসে এসে ধারাও মুখস্থ হয়ে গেল।
সেই থেকে লরি সাগরদিঘি থানায়, স্বামী জেলে। উকিলবাবুরা বলেছিলেন, ‘দু’দিনের ব্যাপার, এটা কোনও মামলা হল!’ দিন দশেক পেরিয়ে যাওয়ার পরে যখন সংসারে আলু আর চালে টান পড়ল তখন থেকে আদালতে ছুটছি। উকিলবাবুরা প্রথম দিকে বলতেন, ‘‘ এ বার জামিন হয়ে যাবে। পরে বুঝলাম, কাজই তো করছেন না ওঁরা। তাই বেল পাওয়ার আশা ক্রমেই ঝিমিয়ে যেতে থাকল।
সামনে ইদ। কিন্তু আমার সামনে সব অন্ধকার। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফোরানোর দশা। স্বামীর উপরই গোটা সংসারটা চলত। অথচ দেখুন, সে চুরিও করেনি। কাউকে ধাক্কাও দেয়নি। স্রেফ দেখতে পায়নি বলে পুলিশ তাকে ধরে জেলে পুরে দিল! এক বার ভাবল না আমাদের মতো দিন আনি দিন খাই মানুষের সংসার কি করে চলে।
উকিলবাবু বলেছেন কবে ধর্মঘট উঠবে বলা যাবে না। মাঝে মধ্যেই খোঁজ নিতে। এখন রোজ আসার পয়সাও নেই। উকিলবাবুর হাতে পায়ে ধরি । কিন্তু কিছু করা যায়নি। শুনলাম দু দিন আগেই সব আদালত খুলেছে। তাই এসেছিলাম। এখন এসে শুনছি জঙ্গিপুর আদালত বুধবারও খোলেনি। জানি না আর ভরসা নেই কারও উপর। বৃহস্পতিবার থেকে নাকি কাজ চালু হবে, আমি আর ভরসা করি না।
এই রোদের মধ্যে বাস, ট্রেকারে করে আসি। আর রোজ হয়রান হয়ে ফিরে যাই। কি কষ্টের মধ্যে যে আছি বলার নয়। স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছি জেলে, দু’দিন। কি চেহারা হয়েছে, বলছে, খুব কষ্ট করে আছে। জানি না এর শেষ কোথায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy