Advertisement
E-Paper

ফিরছে থলে হাতে বাজার যাওয়ার ছবি

কলকাতার বহু আগে থেকে যে শহর কৃষ্টি-সংস্কৃতি, নতুন ভাবনার দিশারী হয়েছে বারবার, সেই শহরের মানুষ সত্যি করেই প্লাস্টিক-থার্মোকল বর্জন করবেন কি না, তার পরীক্ষা। 

সুদীপ ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৬
মিলে মিশে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিজস্ব চিত্র

মিলে মিশে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিজস্ব চিত্র

উদ্বোধনী সৌজন্য শেষ। এ বার সত্যি করেই পরীক্ষার সামনে কৃষ্ণনগর।

কলকাতার বহু আগে থেকে যে শহর কৃষ্টি-সংস্কৃতি, নতুন ভাবনার দিশারী হয়েছে বারবার, সেই শহরের মানুষ সত্যি করেই প্লাস্টিক-থার্মোকল বর্জন করবেন কি না, তার পরীক্ষা।

যে শহরের আনাচে-কানাচে গ্রেটা থুনবার্গের পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা আর ফেসবুকে চর্চা করার মতো নেটিজেনের অভাব নেই, সত্যি সদিচ্ছা সেখানে কতটা, তার পরীক্ষা।

প্রথম সপ্তাহান্তে সেই পরীক্ষায় এই শহর যে সসম্মানে উত্তীর্ণ তা বলা যাবে না, তবে ডাহা ফেলও নয়!

পুরসভা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, প্লাস্টিক-থার্মোকলের ব্যবহার রুখতে ছ’টি দল রোজ নানা এলাকায় ঘুরে নজরদারি চালাবে। নিয়ম ভাঙলে দোকানির ৫০০ টাকা এবং খরিদ্দারের ২০০ টাকা জরিমানা হবে। শনিবার সকালে পাত্রবাজার, নতুন বাজার আর ঘূর্ণি বেলতলা বাজারে অভিযান হয়। বিক্রির জন্য রাখা বেশ কিছু প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, ক্যারিপ্যাক, থার্মোকলের থালা, বাটি বাজেয়াপ্ত হয়। সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ও থার্মোকলের জিনিস বাজেয়াপ্ত হয়েছে শহরের শেষ মাথায় অবস্থিত ঘূর্ণী বেলতলা বাজার থেকে। তিনটি দোকান থেকে প্রায় এক গাড়ি কাপ, গ্লাস, প্লাস্টিক-কোটেড থালা, থার্মোকলের থালা-বাটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

মজার ব্যাপার, ওই বাজারে কিন্তু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার প্রায় নেই। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাই শালপাতা বা কাগজে মুড়িয়ে জিনিস কেনাবেচা করেন। কিন্তু শহরের শেষ মাথায় হওয়ায় আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। তাই বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিকের সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন।

শহরের বাজারগুলিতে বেশির ভাগ দোকানিই এ দিন প্লাস্টিকের ক্যারিপ্যাক দিতে অস্বীকার করেছেন। চট, কাপড় বা নাইলনের থলে হাতে বাজার যাওয়ার ছবিও চোখে পড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। তা বলে ‘বহুরূপে সম্মুখে’ ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক উবে যায়নি।

যেমন রাজার দীঘির ধারে, মল্লিক মাঠের পাশে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকানে দেখা গেল কাগজের কাপের পাশাপাশি প্লাস্টিকের কাপও রয়েছে। এখনও প্লাস্টিক? কারও দাবি, ‘‘কেউ আমাদের বারণ করেনি’’, কারও আশ্বাস, ‘‘সরিয়ে দেব। অনেকে চা নিয়ে একটা বাড়তি কাপ চায়, তখন কাগজের কাপের সঙ্গে প্লাস্টিকের কাপ দিয়ে দিই। এক কাপ চায়ের সঙ্গে দুটো কাগজের কাপ দিলে তো খরচায় পোষাবে না!’’

কারবালা মাঠের কাছে এক মিষ্টির দোকানে দেখা গেল, দিব্যি প্লাস্টিকের কাপে দই বিক্রি হচ্ছে। দোকানির দাবি, নিষেধাজ্ঞার কথা তাঁর জানা নেই। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করে আসছে পুরসভা। নেদেরপাড়া আবার চোখে পড়ল, বাড়ি-বাড়ি দরজার মুখে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিপ্যাক আনাজ ভরে দিচ্ছেন ফেরিওয়ালা।

কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের সদস্য অসীম সাহা বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে আমাদের লাগাতার অভিযান চলবে। ৭৭৯৭৭১৭৭৭৪ নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করে বেআইনি প্লাস্টিক ব্যবহারের খবর পুরসভাকে জানাতে পারেন যে কেউ।’’ তিনি জানান, কেউ খবর দিলে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। তবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, শাস্তির ভয়ে নয়, পরিবেশের কথা ভেবেই এই শহরের সচেতন মানুষ এই উদ্যোগে শামিল হোন।’’

Krishnanagar Plastic Ban Jute Bag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy