Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের খাঁচায় ফিরে এসে কেয়া বলল, কই এক গেলাস জল দেখি

ধরাই পড়ে গেল কেয়া! থানা থেকে পালিয়ে টানা দু’দিন পুলিশকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর পরে, বুধবার দুপুরে বহরমপুরের কোর্ট চত্বর থেকে তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, এই তিন দিনই তার সঙ্গে ছিল রুবেল, সম্পর্কে কেয়ার ‘প্রেমিক’। অল্পের জন্য ফস্কে গিয়েছে সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০২
Share: Save:

ধরাই পড়ে গেল কেয়া!

থানা থেকে পালিয়ে টানা দু’দিন পুলিশকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর পরে, বুধবার দুপুরে বহরমপুরের কোর্ট চত্বর থেকে তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, এই তিন দিনই তার সঙ্গে ছিল রুবেল, সম্পর্কে কেয়ার ‘প্রেমিক’। অল্পের জন্য ফস্কে গিয়েছে সে। আজ, বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলা হবে।

তবে, ধরা পড়লেও চোখে-মুখে বিশেষ উদ্বেগ ছল না কেয়ার। বরং শাড়ির আঁচলে ঘাম মুছে সদ্য-ত্রিশ মহিলা পুলিশ কর্মীদের আদেশ করেছেন, ‘‘কই এক গেলাস জল দিন দেখি!’’ যা শুনে তড়িগড়ি ঠাণ্ডা জলের বোতলও এগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। না দিয়ে উপায় আছে!

গত তিন দিন ধরে জলঙ্গি থানার পুলিশ কর্মীদের দিন-রাত কার্যত এক হয়ে গিয়েছিল। থানার শৌচাগারের জানলার গ্রিলে মর্চে ধরেছিল বেশ কিছুদিন। সোমবার রাতে মর্চে ধরা সেই শিক বাঁকিয়ে জানলা গলেই রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল নূরজাহান ওরফে কেয়া।

বছর সাতেকের সরিফার কানের সোনার দুলের দিকে নজর পড়েছিল কেয়ার। রবিবার সকালে জলঙ্গির কুতুবপুর গ্রামে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির কানের দুল ছিনিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সে। নিশ্চুপে খুনও করে পেলেছিল সরিফাকে।

সন্দেহ হওয়ায় কেয়ার বিরুদ্ধে জলঙ্গি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল মেয়েটির পরিবার। তদন্তে নেমেই পুলিশ বুঝতে পেরেছিল, নিছক অপহরণ নয়, সরিফাকে খুনও করেছে কেয়া। সোমবার বিকেলে তাই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাকে।

থানায় নিয়ে আসার পরে, লেখা হয়ে গিয়েছিল এফআইআর-ও (কেস নম্বর ৩৭৫/১৬)। কিন্তু রাতেই ‘পাখি উড়ে যাওয়ায়’ ফ্যাসাদে পড়েছিল পুলিশ। এ বার কোর্টে হাজির করানো হবে কী করে?

কখনও সীমান্তে, কখনও বা চরের ধান খেত— কেয়ার খোঁজে কম ঘোরেনি পুলিশ। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘মেয়েটির মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে কম ুপথ হাঁটিনি আমরা।’’ এক সময়ে মনে হয়েছিল, চর উজিয়ে বাংলাদেশেই ঢুকে গিয়েছে সে। সীমান্তের শেষ গ্রামেও তাই পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু বিএসএফের নজরদারিতে শেষ পর্যন্ত আর সীমান্ত পার হতে পারেনি তারা। বেগতিক বুঝে এ বার তাই দৌলতাবাদের দিকে পাড়ি দিয়েছিল কেয়া। সহ্গে ছিল রুবেলও। কারণ, দু’জনের মোবাইলের টাওয়ার সে কথাই বলছে। তিন দিন ধরে নাগাড়ে ঘুরে শেষতক, তারা এসেছিল বহরমপুরের খাগড়ার কাছে। পুলিশের অনুমান, ট্রেন ধরে কলকাতা পালানোর মতলব এঁটেছিল তারা। দুপুর থেকে তাই স্টেশনেই আড়ি পেতেছিল পুলিশ। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। বিকেলের মুখে সেই স্টেশনেই হন্তদন্ত হয়ে পা দিয়েছিল কেয়া। সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে ধরতেই বাধা না দিয়ে সে জানিয়ে ছিল, ‘‘কই এক গেলাস জল দিন দেখি।’’

এই ঘটনা অবশ্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পুলিশের গয়ংগচ্ছ মনোভাব। কী হয়েছিল সে রাতে?

কেয়াকে ধরে কিন্তু সত্যি ‘খাঁচা’য় পোরেনি পুলিশ। জলঙ্গি থানা সূত্রের খবর, লকআপ খারাপ থাকায় একটি ঘরে দুই মহিলা কনস্টেবলের পাহারায় রাখা হয়েছিল তাকে। রাত বাড়তেই তাঁদের চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। সেই ফাঁকেই উড়ে গিয়েছিল রাত-পাখি!

প্রায় এক যুগ আগে তৈরি হয়েছে জলঙ্গি থানার নতুন আঁটোসাঁটো বাড়িটি। ওসি ছাড়াও রয়েছেন পাঁচ জন সাব-ইনস্পেক্টর, পাঁচ জন এএসআই। পুরুষ কনস্টেবল আর হোমগার্ড মিলিয়ে সাকুল্যে ৩৪ জন। মহিলা কনস্টেবল আর হোমগার্ড মিলিয়ে আরও ১০ জন।

এত লোকলস্কর থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে থানা থেকে আসামি পালাল? প্রশ্নটা দিনভর গোটা জলঙ্গি জুড়ে ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। থানার কোনও পুলিশকর্মী মুখ খোলেননি। থানায় বসে থাকা জনা কয়েক মহিলা কর্মীর মুখেও কুলুপ এঁটেছিলেন।

ভোরে ভুল যখন ভাঙল, দেরি হয়ে গিয়েছে। ততক্ষণে উড়ে গিয়েছিল কেয়া। সেই হারানো পাখিকে খাঁচায় পুরে এ বার জলঙ্গি থানার পুলিশ বলছে— ‘‘ঢের হয়েছে ঘুম, এ বার কেয়া পাহারায় অনন্ত জেগে থাকা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE