Advertisement
E-Paper

মদ্যপকে ছাড় কেন, ‘আটক’ খোদ পুলিশই

সাতসকালে মদ খেয়ে এলাকায় রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছিল গ্রামেরই জামাই। প্রতিবাদ করতেই সে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জামাই বলে আর রেয়াত করেননি শ্বশুরবাড়ি এলাকার লোকজন। একটি ঘরে তাকে আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় করিমপুর থানার পুলিশকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫২
বারবাকপুরে ‘আটক’ সেই এসআই। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

বারবাকপুরে ‘আটক’ সেই এসআই। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

সাতসকালে মদ খেয়ে এলাকায় রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছিল গ্রামেরই জামাই। প্রতিবাদ করতেই সে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে জামাই বলে আর রেয়াত করেননি শ্বশুরবাড়ি এলাকার লোকজন। একটি ঘরে তাকে আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় করিমপুর থানার পুলিশকে।

অভিযোগ, পুলিশ ওই যুবককে ছেড়ে দিয়ে গ্রামের লোকজনকেই থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। রবিবার বারবাকপুর গ্রামের এমন ঘটনা মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। মদ্যপ ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে তোফাজ্জেল শেখ নামে এক এসআই-কেও ঘণ্টা পাঁচেক আটকে রাখা হয়। পরে করিমপুরের ওসি ও সিআই বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামে যান। মদ্যপ ওই যুবককে গ্রেফতার ও অভিযুক্ত ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রাথমিকভাবে ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সারবত্তা মিলেছে বলেছে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা। নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। গ্রামের লোকজনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ গ্রামেরই বাসিন্দা মিনারুল মণ্ডলের বাড়ির সামনে একটি মদের বোতল ফেলে ওই গ্রামের জামাই, সেনপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল শেখ। মিনারুল ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতেই সাইফুল আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালানোর হুমকি দেয়। রাতে গ্রামও জ্বালিয়ে দেবে বলে সে শাসাতে থাকে। এরপরেই গ্রামের লোকজন তাকে একটি ঘরে আটকে রাখে।

খবর পেয়ে তিন জন কনস্টেবলকে নিয়ে এসআই তোফাজ্জেল হক গ্রামে ঢোকেন। অভিযোগ, গ্রামে এসেই ওই এসআই রীতিমতো হম্বিতম্বি শুরু করেন। পুলিশ তারই পক্ষ নিচ্ছে দেখে পুলিশের সামনেই ফের গ্রামের লোকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সাইফুল গ্রাম ছাড়ে। অথচ পুলিশ তাদের পাকড়াও করার পরিবর্তে গ্রামের লোকজনকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এরপরেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের একাংশ পুলিশকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে কনস্টেবলদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তোফাজ্জেলকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।

পুলিশকে আটকে রাখার খবর পেয়ে গ্রামে ছুটে আসেন করিমপুরের ওসি কুন্তল মণ্ডল, করিমপুরের সিআই রূপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও থানারপাড়ার ওসি মুকুন্দ চক্রবর্তী। তাঁরা ওই পুলিশকর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজনের কাছে অনুরোধ করেন। গ্রামবাসীরা দাবি করেন, তেহট্টের এসডিপিওকেও গ্রামে আসতে হবে। পরে সাইফুলকে গ্রেফতার ও পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ছেড়ে দেওয়া হয় তোফাজ্জেলকে। পরে পুলিশ রেজাউলের শ্বশুরবাড়ি ও তার বাড়িতে তল্লাশি করে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দু’টি প্রমাণ সাইজের দা উদ্ধার করে।

এ দিন পুলিশের এই ভূমিকায় বেজায় চটেছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা সিপিএমের পঞ্চায়েতের সদস্যা ফিরোজা মণ্ডল। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ যদি অপরাধীদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবেন?’’ গ্রামের আর এক বাসিন্দা আজম আলি শেখ বলেন, “এর আগেও সাইফুল আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লোকজনকে চমকেছে। পুলিশকে সে কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’

ওই এসআই তোফাজ্জেল হকের সাফাই, ‘‘না বুঝে এটা করে ফেলেছি। পরে ভুল বুঝতে পেরেছি।’’ কিন্তু গ্রামবাসীরা তো পুলিশকে সবকিছুই জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ভুল এমনটা হল কী করে? বলাই বাহুল্য, এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

police village karimpur Alcoholic panchayet cpm Firoza Mandal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy