Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
তহিদুল হত্যা কাণ্ড

কামরুজ্জামান কোথায়, মুখে কুলুপ পুলিশের

সিপিএম কর্মী খুনের পরে কেটে গিয়েছে পাক্কা চারদিন। এলাকার লোকজনের দাবি, ওই ঘটনার পর কয়েকদিন মূল অভিযুক্ত শাসকদলের দাপুটে নেতা কামরুজ্জামানকে (কামরু) এলাকাতেই দেখা গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

সিপিএম কর্মী খুনের পরে কেটে গিয়েছে পাক্কা চারদিন। এলাকার লোকজনের দাবি, ওই ঘটনার পর কয়েকদিন মূল অভিযুক্ত শাসকদলের দাপুটে নেতা কামরুজ্জামানকে (কামরু) এলাকাতেই দেখা গিয়েছিল। বুক ফুলিয়ে সে পাড়ার আনাচে-কানাচেই ঘুরেছে। পুলিশ তখন তাকে পাকড়াও করার ব্যাপারে কো‌নও হেলদোল দেখায়নি। পরে বাম-কংগ্রেসের যৌথ চাপে কামরুজ্জামান এলাকা ছাড়ে। গোপন ডেরায় আশ্রয় নিয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, পুলিশ তৃণমূলের ওই ক্ষমতাধর নেতাকে ধরার কোনও চেষ্টাই করছে না।

গত বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সাতসকালে গ্রামের স্কুলের বুথের অদূরে খুন হন ডোমকলের হরিডোবা গ্রামের সিপিএম কর্মী তহিদুল মণ্ডল। মৃতের পরিবারের লোকজনের দাবি, তাঁরা স্বচক্ষে দেখেছিলেন এলাকারই তৃণমূল নেতা কামরুজ্জামান ওই খুন করেছে। ঘটনার পর কামরুজ্জামানকে মূল অভিযুক্ত করে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগও দায়ের করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ তাকে ধরতে একেবারেই গা করছে না।

অভিযুক্তদের তালিকায় ২০ জনের নাম থাকলেও নাম-কা ওয়াস্তে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে রবিবার প্রশ্ন তুলে দিল মৃত তহিদুলের ছেলে রহিদুল ইসলাম। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ ইচ্ছা করে বাবার খুনিদের আড়াল করছে।’’ গোটা এলাকার লোকজনের দাবি, দিনের আলোয় একজনকে খুন হলেও অভিযুক্তদের ধরতে পারছে না পুলিশ। পুলিশের অবশ্য বার বার দাবি করে যাচ্ছে, খুব দ্রুত কামরুজ্জামান সহ সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে। তবে বিরোধীদের দাবি, কামরুজ্জামান এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকী তার শাগরেদরা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকিও দিচ্ছে। তবে পুলিশ তাঁকে খুজে পাচ্ছে না। এটা বিশ্বাস করা যায় না। সিপিএমের ডোমকল জোনাল কমিটির সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘লোক দেখানোর জন্য পুলিশ জয়নুদ্দিন শেখ নামে এক বৃদ্ধকে শনিবার গ্রেফতার করেছে। আদতে পুলিশ শাসকের ভয়ে এ ভাবে লেজ গুটিয়ে থাকছে। ওই এলাকা থেকে খবর পাচ্ছি, খুনিরা কেবল বুক ফুলিয়ে ঘুরেই বেড়াচ্ছে না, আবারও খুনের হুমকিও দিচ্ছে। পুলিশ ব্যাবস্থা না নিলে আমরাও বিষয়টি নিয়ে পথে নামতে বাধ্য হব।’’ এ দিনও থমথমে হরিডোবা। শোক ভুলতে পারছে গ্রামটা। তার মাঝে আবারও নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার শেখের অভিযোগ, ‘‘ওই দুষ্কৃতীরা এলাকার লোকজনের উপর অত্যাচার করছে। মাঠে চাষ করাও বন্ধ করে দিয়েছে।’’

পুলিশের দাবি, ওই এলাকায় ক্যাম্প আছে। তাছাড়া নিয়মিত পুলিশি টহলও চলছে। ফলে অভিযুক্তরা আড়ালে-আবডালে গ্রামে ঢুকে হুমকি দিচ্ছে, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। পুলিশের এই দাবি মানতে নারাজ গ্রামবাসীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস পাচ্ছি না। পাছে পুলিশই অভিযুক্তদের বলে দেবে, কারা নালিশ করেছে। তখন বিপদ আরও বাড়বে।’’

কামরুজ্জামানকে ধরার ব্যাপারে পুলিশের এত শীতলতার কারণ কী?

হরিডোবা এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরের রাজনীতিতে কামরুজ্জামানের প্রভাব অনেক দিন ধরেই। নিজে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে প্রধান হয়। ২০১৩ সালে স্ত্রীকে ভোটে দাঁড় করান। স্ত্রী প্রধান হন। কিন্তু আসলে ক্ষমতার চাবি থাকত কামরুজ্জামানের হাতে। মাস ছয়েক আগে শিবির
বদলে সে তৃণমূলে যোগ দেয়। তারপর থেকে তার পয়সাকড়িও দিন দিন বাড়তে থাকে। অচিরেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেন ও তাঁর ছেলে সৌমিকের ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে সে। ডোমকল শহর তৃণমূলের সভাপতি হয় এই বিতর্কিত নেতা। এ বারের ভোটেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যায়।
সৌমিকের সঙ্গে বেশিরভাগ সভা-সমিতিতে তাকে দেখা যেত। অভিনেতা হিরণের সঙ্গে হুডখোলা জিপে সৌমিকের সঙ্গে তাকেও ঘুরতে দেখা গিয়েছিল।

বিরোধীদের অভিযোগ, সৌমিকের হাত মাথায় থাকায় কামরুজ্জামান দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার ইটভাটা থেকে মাস খানেক আগে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। সাগরেদ জুটিয়ে নানা অবৈধ কারবারে হাত পাকিয়েছিল সে। বিরোধীদের অভিযোগ, সৌমিক হোসেনের কারসাজিতেই কামরুজ্জামান পার পেয়ে যাচ্ছে। খুন করেও দিব্যি রয়েছে। পুলিশ তাকে ধরছে না। সৌমিক হোসেনের অবশ্য দাবি, তিনি কোনও অভিযুক্তকে আশ্রয় দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police tmc cpim murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE