Advertisement
E-Paper

কার্তিককে মারে গোপাল: পুলিশ

কার্তিক বিশ্বাসের খুনি আর কেউ নয়, ওষুধের স্টকিস্ট পিন্টু ভট্টাচার্যের বন্ধু গোপাল ঘোষই। গত ১৪ অক্টোবর তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০১
গ্রেফতারের পরে আদালতে গোপাল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

গ্রেফতারের পরে আদালতে গোপাল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

পাক্কা চার সপ্তাহ পার!

শেষমেশ সোমবার পুলিশ দাবি করল, কার্তিক বিশ্বাসের খুনি আর কেউ নয়, ওষুধের স্টকিস্ট পিন্টু ভট্টাচার্যের বন্ধু গোপাল ঘোষই। গত ১৪ অক্টোবর তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উঠতি মস্তান গোপালকে ধরার সময়ে পুলিশ জানিয়েছিল, কার্তিক খুনে তার ভূমিকা স্পষ্ট নয়। এ দিন নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য দাবি করেন, “ওষুধ সংস্থার দালালির কমিশন নিয়ে বিবাদের জেরে গোপাল ঘোষই গুলি করে খুন করেছে। জেরায় সে তা কবুলও করে নিয়েছে।” এ দিন কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে ফেরার সময়ে তাঁর সামনেই গুলি করে মারা হয়েছিল ওষুধের দালাল কার্তিককে। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ছিলেন কুমুদরঞ্জনের সর্বক্ষণের সঙ্গী। কমিশন নিয়ে আর এক সংস্থার দালাল সাগর নাথ ওরফে বাবনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চলছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ বাবনকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে জেরা করে এবং আরও কিছু সূত্র ধরে পিন্টুকে ধরা হয়।

কুমুদরঞ্জনের বাড়ির সামনে থাকা ক্লোজ়়ড সার্কিট ক্যামেরার ছবিতে এক হেলমেট পরা আততায়ীকে ছুটে এসে গুলি ছুড়তে এবং পরে কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে চলে যেতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সে যে কে তা জানতে এবং তার নাগাল পেতে পুলিশের ঘাম ছুটে যায়। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে বাবন আর পিন্টু মুখই খুলছিল না। শেষে টানা জেরার মুখে তারা ভেঙে পড়ে।

পুলিশের দাবি: কার্তিক লাভের গু়ড় খেয়ে যেতে থাকায় গোপালকে দিয়ে তাকে খুনের ছক কষেছিল বাবন আর পিন্টু। গোপাল পিন্টুর খুবই ঘনিষ্ঠ। তাই সে রাজি হয়ে যায়। ওই রাতে পিন্টু হাসপাতাল চত্বরেই ছিল। কার্তিক আর বাবনকে সঙ্গে নিয়ে রাউন্ড দেন কুমুদরঞ্জন। রাউন্ড শেষে কার্তিককে নিয়ে গাড়িতে তিনি হাসপাতাল থেকে রওনা দেন। বাবন হাসপাতালেই থেকে যায়। গোপালকে ফোন করে পিন্টু। খবর পেয়ে পিন্টুর মোটরবাইক নিয়ে সে চলে যায় কুমুদরঞ্জনের বাড়ির সামনে। বাড়ির পাশেই গলিতে রাস্তার দিকে মুখ করে বাইক রেখে, হ্যান্ডেলে লাল ফুল-হেলমেট ঝুলিয়ে সে অপেক্ষা করতে থাকে। খানিক বাদে গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কুমুদরঞ্জন আর কার্তিক নামেন। তখনই হেলমেট মাথায় পরে ছুটে
যায় গোপাল।

তবে যে কাউন্সিলর স্বপন সাহা দাবি করেছিলেন, হাসপাতালের মূল গেটের বাইরে কৃষ্ণনগর পুরসভার লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিকিৎসকের গাড়ির পিছু ধাওয়া করে একটি মোটরবাইক বেরোতে দেখা গিয়েছিল? আর তাতেও সওয়ার ছিল লাল হেলমেট পরা এক জন? পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমনদীপ এসে নাকি সেই জায়গাটা বারবার খুঁটিয়ে দেখেছিলেন? পুলিশ সুপার অবশ্য এ দিন দাবি করেন, হাসপাতাল থেকে কুমুদরঞ্জনের গাড়ির পিছনে কোনও বাইক বেরোতে তাঁরা দেখেননি।

কার্তিক খুনের খবর জানাজানি হতেই বাবন চলে এসেছিল ঘটনাস্থলে অর্থাৎ কুমুদরঞ্জনের বাড়িতে। বাকি দু’জন কোথায় ছিল? পুলিশের দাবি: খুনের পরে গোপাল সোজা পিন্টুর বাড়িতে চলে যায়। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত কাটিয়ে সে বাড়ি ফেরে। পিন্টু থেকে যায় নিজের বাড়িতেই। পরে ওই বাড়ি থেকেই মোটরবাইক আর লাল ফুল-হেলমেট উদ্ধার হয়। পরে পিন্টুই জেরায় জানায়, খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র গোপাল ফেলে দিয়েছে চ্যাটার্জি পুকুরে। পুলিশ সেই পুকুর থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে। এর পরেই গোপালকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তবে যে প্রথমে বলা হচ্ছিল, বাইরে থেকে ভাড়া করা খুনি আনা হয়েছিল এবং খুনের পরে নিজের বাইকে চাপিয়ে তাকে হাইরোডে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল পিন্টু? পুলিশের দাবি, শুরুর দিকে বাবন আর পিন্টু তাদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তদন্ত এগোতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ধৃতদের চেনা কেউ এই কাজ করেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে আততায়ীর পরনে যে সবুজ জামা ও নীল জিনস দেখা গিয়েছিল, গোপালের বাড়ি থেকে তা পাওয়া গিয়েছে।

Police Arrest Crime Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy