Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সপরিবার শিক্ষক খুনে এখনও কুয়াশা

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির মধ্যে ঢুকে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁদের। ঘরের মধ্যে আলমারি খুলে কিছু খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু কেন এই খুন, কুয়াশা কাটেনি।

সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র

সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

দশমীর দুপুরে নিজের বাড়িতেই খুন হলেন একই পরিবারের তিন জন। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের সদরঘাট লাগোয়া লেবুবাগানে বেলা ১২ নাগাদ রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল (৪০), তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি (৩০) ও পুত্র অঙ্গনের (৫) দেহ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির মধ্যে ঢুকে হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁদের। ঘরের মধ্যে আলমারি খুলে কিছু খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু কেন এই খুন, কুয়াশা কাটেনি।

এই ঘটনার পরে বাড়িতে এসেছিলেন দুধওয়ালা রাজীব দাস। রাজীবই পুলিশকে জানান, বাড়ির দরজা ঠেলতেই তা খুলে যায়। ঘরে ঢুকেই তিনি দেখেন ডানপাশের ঘরে খাটের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই স্কুল শিক্ষক পড়ে রয়েছেন। তখনও বাড়ির মধ্যেই ছিল আততায়ী। রাজীবের চিৎকার শুনেই পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় সে। রাজীব বলেন, “কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পরা ওই যুবক পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে ধরতে ছুটে যাই কিন্তু পাঁচিল টপকে সে পালায়।’’ চিৎকার শুনে, প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। দেখা যায় বন্ধুপ্রকাশের ঘরেই মেঝেয় পড়ে রয়েছে বছর ছয়েকের শিশুটির দেহ। পাশের ঘরে খাটে উপুড় হয়ে বিউটি।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, জিয়াগঞ্জের বাড়ি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই খুন। খুনের রকম দেখেও পুলিশের অনুমান তীব্র আক্রোশ থেকে এই খুন করা হয়েছে।

নিহত বন্ধুপ্রকাশের মামার বাড়ি সাগরদিঘির সাহাপুর গ্রামে। সেখানেই মামার কাছে মানুষ তিনি। মা মায়ারানি পালও সেখানেই থাকেন। সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলেই ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষকতা করতেন বন্ধুপ্রকাশ। বিয়ে করেন বছর ছয় আগে। বহু দিন আগে জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে একটি জমি কিনেছিলেন তাঁর মা। বছর দেড়েক আগে সেখানেই বাড়ি করে চলে এসেছিলেন তিনি। রবিবার অষ্টমীর দিন সাহাপুরেরও গ্রামের বাড়িতে সারা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে যান জিয়াগঞ্জের বাড়িতে। তার পরেই মঙ্গলবার সকালে সপরিবারে খুন হন তিনি। বন্ধুপ্রকাশের মাসির ছেলে নবগ্রামের রাইণ্ডার বাসিন্দা বন্ধুকৃষ্ণ ঘোষ বুধবার ওই খুনের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তবে, খুনের পরে চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার কারণ নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা।

বন্ধুকৃষ্ণ বলেন, ‘‘দাদাকে যে বাবে খুন করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে তীব্র আক্রোশ ছিল, কিন্তু কার এমন আক্রোশ, কানি বা কী— বুঝতে পারছি না।’’ এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলব না।’’

বুধবার, ওই শিক্ষকের বোন জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানেরই বাসিন্দা বন্ধুপ্রীতি পাল ও ভগ্নীপতি পেশায় ব্যবসায়ী মনোজ পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষক মাস কয়েক আগে, তার এক বন্ধুকে ছ’লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিল। এবং ওই বন্ধুর সঙ্গে একটি প্রসাধনী সামগ্রী কোম্পানির ব্যবসাও শুরু করেছিল। সে ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police Jiaganj Jiaganj Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE