Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তোলার টাকা কম, পুলিশের মার কান্দিতে

বেআইন-ই এখানে আইন। আইন রক্ষা করার কথা যাদের, নিয়ম না মানার নিয়ম তাদেরই তৈরি করা। অবশ্য, আবার টাকা দিয়ে পার পাওয়াকে নিয়মসিদ্ধ করে ফেলেছে আর এক দল।

রাস্তার উপর ট্রাক রেখে চলছে অবরোধ। ছবি: কৌশিক সাহা

রাস্তার উপর ট্রাক রেখে চলছে অবরোধ। ছবি: কৌশিক সাহা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৪
Share: Save:

বেআইন-ই এখানে আইন। আইন রক্ষা করার কথা যাদের, নিয়ম না মানার নিয়ম তাদেরই তৈরি করা। অবশ্য, আবার টাকা দিয়ে পার পাওয়াকে নিয়মসিদ্ধ করে ফেলেছে আর এক দল।

সময় বিশেষে সেই নিয়মও বদলে নেয় পুলিশ। আর নিয়ম না মানলে? পুলিশ ছুঁলে যত ঘা পড়ার কথা তত ঘা-ই পড়ে। যেমন পড়ল শনিবার।

ঘটনাস্থল কান্দির জীবন্তিপুর। অভিযোগ, দাবি মতো তোলা দিতে রাজি না হওয়ায় দুটি লরির খালাসিকে বেধড়ক পেটালো পুলিশ।

পুলিশের কাছে লিখিতভাবে তেমন অভিযোগই জমা পড়েছে। এই ঘটনার পর এদিন লরির চালকরা কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে। তাতে সামিল হয় সাধারণ মানুষও। নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য হয় পুলিশ প্রশাসনও। অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর।

কান্দি শহরের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তাই, ময়ূরাক্ষী থেকে বালি, কিংবা বীরভূম থেকে পাথর বোঝায় লরি হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহি সড়ক হয়ে খরগ্রাম থানার উপর দিয়ে গাঁতলা ঘাটের উপর দিয়ে জীবন্তি মোড় হয়ে বহরমপুরে যায়। জীবন্তিতে দুটি দুর্বল সেতু রয়েছে। সেগুলির উপর দিয়ে আবার অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই লরি-বাম্পার চলাচল নিষিদ্ধ।

অভিযোগ, সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে কান্দি থানার পুলিশ। সর্বক্ষণের জন্য একটি সেতুর মুখে পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। লরি-ডাম্পার চালক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে পুলিশ ‘ওভার লোডেড’ গাড়ি থেকে চাকা নেয়। তাতে মাঝে মধ্যে যানজটও তৈরি হয়।

ঠিক কী ঘটেছিল এদিন?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন বীরভূমের রামপুরহাট থেকে পাথর বোঝায় তিনটি ডাম্পার বহরমপুরের দিকে যাচ্ছিল। জীবন্তি মোড়ের কাছে যথারীতি জনা চারেক পুলিশ কর্মী তাদের কাছে টাকা চায়। একটি ডাম্পারের চালক সেলিম শেখ জানান, অন্যান্য দিনের মতোই খালাসি পুলিশকে ১০০ টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ কর্মীরা তাঁদের থেকে ২০০ টাকা দাবি করে। কেন ১০০ টাকার বদলে ২০০ টাকা তা নিয়ে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে খালাসি রাজেশ শেখের বচসা শুরু হয়।

অভিযোগ, এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘আমরা যা চাইব, তাই দিতে হবে।’’ বচসার মাঝেই আচমকা ওই পুলিশকর্মী রাজেশ শেখকে লাঠিপেটা করতে শুরু করে। পিছনের একটি ডাম্পার থেকে ৩০০ টাকা চাওয়ায় সেখানেও পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। সেই ডাম্পারের খালাসি মর্শিদুল শেখকেও পুলিশ লাঠিপেটা করে।

এর পরই লরির চালক-খালাসিরা রাস্তার উপর আড়াআড়া লরি দাঁড় করিয়ে অবরোধ শুরু করে। তাতে সামিল হয় অন্যান্য লরি চালকরা। অবরেধে যোগ দেন এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অবরোধ চলে।

কান্দি থানার আইসি সুনয়ন বসু গিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “পুলিশ টাকা তুলছিল। সেখানে ডাম্পারের দু’জন খালাসিকে মারধর করেছে বলে শুনেছি। কোন পুলিশ কর্মীরা জড়িত, এসডিপিও কে তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” কেন পুলিশকে টাকা দিতে হয়? ডাম্পার চালক সেলিম শেখের সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘ওভারলোড গাড়ি। টাকা তো দিতেই হবে।’’ বসিন্দাদের অভিযোগ, এই লরির মালিকরাও পুলিশের সঙ্গে সমানভাবে দায়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Truck Police Lynched
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE