Advertisement
E-Paper

গরম চায়ে ঘুম কাটছে চালকদের

ভয়ে ভয়েই লরি দাঁড় করান তিনি। কিন্তু,  এ পুলিশ তো হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। হাতে জলের বোতল। গাড়ি থেকে নিচে ডেকে হাতে জলের বোতল তুলে দিয়ে পুলিশ কর্মী বলেনএকটু চোখে-মুখে জল দিয়ে নিন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
চা-চর্চা। সুতিতে। নিজস্ব চিত্র

চা-চর্চা। সুতিতে। নিজস্ব চিত্র

একে মাঝ রাতের সুনসান জাতীয় সড়ক। তাই পুলিশ! পুলিশকে হাত তুলে দাঁড়াতে দেখে বুক কেঁপে গিয়েছিল ইসমাইল শেখের। গাড়িতে তেমন কিছু নেই, কাগজপত্রেও গোলমাল কিছু নেই। তবুও পুলিশ বলে কথা। তাঁরা ছুলে আবার ...।

ভয়ে ভয়েই লরি দাঁড় করান তিনি। কিন্তু, এ পুলিশ তো হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। হাতে জলের বোতল। গাড়ি থেকে নিচে ডেকে হাতে জলের বোতল তুলে দিয়ে পুলিশ কর্মী বলেনএকটু চোখে-মুখে জল দিয়ে নিন। বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। কাঁধের গামছা দিয়ে মুখ মুছতে আর এক পুলিশ কর্মী এগিয়ে দিলেন চায়ের ভাঁড়। বললেন, ‘‘গরম চা খেয়ে ঘুমটা একটি তাড়িয়ে নিন ভাই। আবার তো গাড়ি চালাতে হবে।’’

গত কয়েকদিন ধরে ইসমাইলের মতো অন্যান্য গাড়়ির চালকরাও বিস্মিত হচ্ছেন। তার কারণ, রাজ্য জুড়েই শুরু হয়েছে এমন কর্মকাণ্ড। রাতের গাড়ির চালকদের থামিয়ে চা-জল খাওয়ানো হচ্ছে। যাতে তাঁরা ঘুমিয়ে না পড়েন। পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, রাতে বেশিরভাগ গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তা ঠেকাতেই এমন উদ্যোগ।

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকদিন ধরেই চলছে পুলিশের ডা-জল খাওয়ানো। লরি চালক রমেন সিংহ এক ট্রান্সপোর্ট সংস্থার মালপত্র নিয়ে শুক্রবার দুপুরে রওনা দিয়েছেন কলকাতার স্ট্যান্ড রোড থেকে। যাবেন অসমে। শনিবার রাতে চাঁদের মোড়ের টোল প্লাজায় পুলিশের চা-জলের ‘আতিথ্য’ তাঁর মন ছুঁয়ে গিয়েছে।

সুতি থানার ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ বলছেন, “প্রতিদিন রাতের জাতীয় সড়কে সুতি এলাকায় কোনও না কোনও দুর্ঘটনা ঘটছিলই। এমনকী, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরির পিছনে গিয়েও ধাক্কা মেরেছে ঘুমের ঘোরে থাকা গাড়ির চালক। গত সাতদিনে এ ধরনের দুর্ঘটনা একটাও ঘটেনি। এটা চা-জলের সুফল বলেই মনে হচ্ছে।

জেলার ফরাক্কা থেকে শুরু করে সুতি, নবগ্রাম, বহরমপুর-সহ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চালকদের জল খাওয়ানো হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, “গাড়ি চালানোর সময় রাতে চালকদের ঘুম আসতে পারে। তাই দূর্ঘটনা এড়াতে একদিকে যানবাহনের চালকদের জল খাওয়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের বিষয়ে তাঁদের সচেতনও করা হচ্ছে।”

জগন্নাথ মন্ডল কলকাতা–শিলিগুড়ি সরকারি বাস চালান। তিনি বলছেন, “আমাদের দু’জন চালক থাকে। তবুও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশ জল খাওয়া, পথ নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন করছে। এর ফলে আমাদের সুবিধা হচ্ছে।”

নদিয়ায় ভোর ৪টে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলছে পুলিশের এমন কর্মসূচি। ভোরের দিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন চালককে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কল্যাণী মহকুমার তিন জায়গায় পুলিশের তরফে এমন কর্মসূচী চলছে। কল্যাণী থানা এলাকার বুদ্ধপার্ক, চাকদহের নরপতিপাড়া ও হরিণঘাটা থানা এলাকার মোহনপুর আড়াই নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় নিয়ম করে পুলিশ গাড়ি চালকদের জল দিচ্ছেন। একই ভাবে শান্তিপুর থানার পুলিশও জাতীয় সড়কের ট্রাক চালকদের দাঁড় করি জল ও চা খাওয়াচ্ছেন।

Lorry Driver Police Tea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy