Advertisement
E-Paper

ডুব দিতে ভয়, নদীর জলেই লুকিয়ে রোগ

নদীতে স্নান করা তাঁর বহু দিনের অভ্যেস। ‘‘এ নিয়মে ছেদ পড়লে কেমন যেন মনে হয়। যেন কী একটা করিনি...,’’ আক্ষেপ করে বলছিলেন মাজদিয়ার পাবাখালির বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর প্রৌড়া বিনাপানি অধিকারী।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৬
দূষিত: শিবনিবাসে কালো হয়ে গিয়েছে চূর্ণীর জল। নিজস্ব চিত্র

দূষিত: শিবনিবাসে কালো হয়ে গিয়েছে চূর্ণীর জল। নিজস্ব চিত্র

নদীতে স্নান করা তাঁর বহু দিনের অভ্যেস। ‘‘এ নিয়মে ছেদ পড়লে কেমন যেন মনে হয়। যেন কী একটা করিনি...,’’ আক্ষেপ করে বলছিলেন মাজদিয়ার পাবাখালির বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর প্রৌড়া বিনাপানি অধিকারী।

এই অভ্যেসটা বজায় রাখতে গিয়েই যে যত বিপত্তি। ইদানীং তো স্নান আর ভাল করে করা হয় না। বাড়ির ধার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া চূর্ণীর কালো দুর্গন্ধময় জলে একটা ডুব দিয়েই কোনও মতে ছুট দেওয়া বাড়ির দিকে। তা সেই পথে যেতে যেতেই বিরবির করছিলেন প্রৌড়া, ‘গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে গো’। টিউবঅয়েলের জলে গা-হাত-পা ধুয়ে তবে রক্ষে। প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘‘অনেক দিনের অভ্যস নদীতে স্নান করা। তাই দূষিত জল জেনেও স্নান করতে নামি। বাড়ি ফিরেই আবার টিউবঅয়েলের জলে স্নান করতে হয়।”

এ অবস্থা শুধু বিনাপানিদেবীর নয়। চুর্ণীর তীরবর্তী এলাকার সব বাসিন্দারই কমবেশি এক অভিজ্ঞতা।

চূর্ণীর জল দূষণের জেরে অনেকেই স্নান করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্য দিকে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর মাছ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদিয়া লাগোয়া বাংলাদেশের দর্শণায় একটি চিনি মিলই এর জন্য দায়ী। ওই মিল থেকে মাঝেমধ্যেই রাসায়নিক ও তরল বর্জ্য পড়ে মাথাভাঙা নদীতে। যার জেরে মাথাভাঙা ও চুর্ণী নদীর জল দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সোমবার ‘মাথাভাঙা ও চুর্ণী রেসকিউ কমিটি’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের কাছে সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। এর কপি দেওয়া হয়েছে নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তকেও।

সংস্থার সম্পাদক স্বপনকুমার ভৌমিক বলেন, “বাংলাদেশের দর্শণার চিনিমিলের দূষিত রাসায়নিক মাথাভাঙার জলকে দূষিত করছে। ফলে নদিয়ায় মাথাভাঙা ও চুর্ণী নদীর জল দূষিত হচ্ছে। যার জেরে এক দিকে নদীর জীব বৈচিত্র্যের পরিবর্তন ঘটছে। অন্য দিকে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, চুর্ণী হয়ে দূষিত জল ভাগীরথীতে মিশছে। ফলে ভাগীরথীর জলও দূষিত হচ্ছে।” স্বপনবাবুর দাবি, নদীটাকে বাঁচাতেই সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। তিস্তার জল নিয়ে যেমন দু’দেশের মধ্যে কথা চলছে, তেমনই তাঁরা চান মাথাভাঙা ও চুর্ণীর দূষণ নিয়েও ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলুক।

নদিয়ার জেলাশাসক বলেন, “ওদের চিঠি আমি পেয়েছি। এ বিষয়ে আমি রানাঘাটের মহকুমাশাসকের কাছ থেকেও রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব।”

পাবাখালির বাসিন্দা বৃষকেতু পাল জানান, এক সময় এই নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা করে মালপত্র যেত। কিন্তু নদী ক্রমশ মজে যাওয়ার ফলে সে সব পাঠ চুকেছে। তার ওপরে মাথাভাঙা নদী হয়ে বাংলাদেশের দিক থেকে দূষিত জল চুর্ণীতে ঢুকছে।

মাজদিয়ার ভেড়িপাড়ায় মাথাভাঙা নদীর পাড়ে বাড়ি সুদেব হালদারের। নদীতে মাছ ধরে এক সময় তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু দূষণের জেরে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষার সময় নদীতে জল বেশি থাকায় দূষণ কম হয়। জলের স্রোতে নোংরা-আবর্জনা ভেসে বেরিয়ে যায়। সে সময় মাছ তা-ও পাওয়া যায়। কিন্তু বছরের অন্য সময়টা, বিশেষ করে গরমে, নদীতে জল কমে যায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ে দূষণ। ফলে নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। দূষণ রোধ করা গেলে, আমাদের উপকার হয়।’’

River Churni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy