Advertisement
E-Paper

গ্রাহকদের টাকা জমাই পড়েনি ব্যাঙ্কে, দিশেহারা গরিব মানুষ

গত কয়েক বছর ধরে নবদ্বীপের ভালুকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ ভালুকা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টে টাকা জমাচ্ছিলেন মুকুন্দপুর, ভালুকা, আনন্দবাস, নতুন মাঠপাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩২
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

ওঁদের কেউ বিড়ি বেঁধে, কেউ বা বাড়ি বাড়ি সাইকেল করে ঘুরে বালাপোশ বিক্রি করেন কিংবা ভ্যান চালিয়ে তিল তিল করে জমিয়েছিলেন টাকা। কেউ ভেবেছিলেন, সঞ্চয়ের ওই টাকায় মেয়ের বিয়ে দেবেন। কেউ বা স্বপ্ন দেখেছিলেন মাথার উপর এক টুকরো ছাদের। কিন্ত সেই সব ভাবনা, স্বপ্ন এক নিমেষে মাটিতে মিশে গিয়েছে মুকুন্দপুরের অসিত দাস, রাধারানি দেবী, অবলা দাস, সাহেনা বিবিদের। যার পিছনে হাত রয়েছে এলাকার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা সিএসপি’র এজেন্ট জীবন বিশ্বাসের।

গত কয়েক বছর ধরে নবদ্বীপের ভালুকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নবদ্বীপ ভালুকা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টে টাকা জমাচ্ছিলেন মুকুন্দপুর, ভালুকা, আনন্দবাস, নতুন মাঠপাড়ার বেশ কিছু বাসিন্দা। কিন্তু গত সাত আট মাস ধরে ওই সার্ভিস পয়েন্টটি বন্ধ থাকায় তাঁদের সন্দেহ হয়। ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের দেওয়া কোনও টাকাই ব্যাঙ্কে জমা পড়েনি। সার্ভিস পয়েন্টে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত এজেন্ট জীবন বিশ্বাস। প্রায় সর্বস্ব খোয়ানো মানুষগুলিকে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েই দায় সেরেছে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভালুকা শাখা। সেই মতো শনিবার নবদ্বীপ থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

মেয়ের বিয়ের জন্য ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভালুকা শাখার অধীন স্থানীয় কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে প্রায় দু’লক্ষ টাকা জমিয়ে ছিলেন মুকুন্দপুর মাঠপাড়ায় রাধারানি মজুমদার এবং তার স্বামী অসিত মজুমদার। কিন্তু আট মাস সেন্টারে তালা ঝুলতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় ওই দম্পতি ব্যাঙ্কে খোঁজ নিতে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে এ পর্যন্ত কোনও টাকাই জমা পড়েনি। এমন আরও বহু প্রতারিত মানুষ এই দিন নবদ্বীপ থানায় আসেন। ওই সেন্টারে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়ে ছিলেন নতুন ঘোলাপাড়ায় ভ্যান-চালক অবলা দাস। গৃহবধূ সাহেনা বিবি, কৃষক দয়াল চৌধুরীদেরও একই অভিযোগ। টাকার পরিমাণ প্রত্যেকের আলাদা হলেও বিপদে পড়েছেন সকলেই।

শনিবার থানায় বসে বিড়ি-শ্রমিক রাধারানী তোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “বড় মেয়ের বিয়ের জন্য দু’জনে মিলে ২০১৬ সাল থেকে কষ্ট করে ওখানে টাকা জমাচ্ছিলাম। আমরা জানতাম, ওখানে টাকা জমানো মানে ব্যাঙ্কেই টাকা রাখা। এখন দেখছি, ঠকে গেলাম। জীবনের সবটুকু সঞ্চয় চলে গেল!”

বাজারের কাছে স্থানীয় পঞ্চায়েত ভবনের উপরে ছিল ওই কেন্দ্রটি। এলাকার অনেকেই ওই কেন্দ্রের মাধ্যমে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতেন। বিনিময়ে ওই কেন্দ্র থেকে টাকা জমা নেওয়ার রসিদও দেওয়া হত। সহজ বিশ্বাসে তাঁরা সেই রসিদ নিতেন। হঠাৎই সাত-আট মাস ধরে কেন্দ্রটির দরজা না খোলায় ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের সন্দেহ হয়। শুক্রবার সকলে মিলে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মুকুন্দপুর শাখায় গিয়ে জানতে পারেন, কারও কোনও টাকাই জমা পড়েনি। জমা দেওয়ার রসিদগুলি আসলে সবই জাল।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তখন তাঁদের জানান, এই বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। তাঁরা পুলিশে অভিযোগ জানান। সেই মতো শনিবার নবদ্বীপ থানায় অভিযুক্ত জীবন বিশ্বাসের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন সকলে।

এ বিষয়ে ব্যাঙ্কের মুকুন্দপুর শাখার ম্যানেজার সুমন্ত দাস মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কিছু জানার থাকলে উপর মহলে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।”

Customer Service Point CSP Bank Money Fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy