Advertisement
E-Paper

নেই ভাল সাইকেল, তবু বিজয়ী

প্রতিযোগিতার উপযুক্ত দু’আড়াই লাখ টাকা দামের সাইকেল নেই। নেই ১০-১৫ হাজার টাকা দামের বিশেষ জুতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৮
চ্যাম্পিয়নেরা। নিজস্ব চিত্র

চ্যাম্পিয়নেরা। নিজস্ব চিত্র

রাজমিস্ত্রি বাবা ভিন্ রাজ্য থেকে টাকা না পাঠালে বাড়িতে উনুন জ্বলে না। মা বিড়ি না বাঁধলে আনাজ কেনার পয়সা জোটে না। মাথার উপর টালির চাল থাকলেও ঘরের দরজা-জানলা বসানোর সামর্থ্য নেই। বদলে হাফপ্যান্ট পরে সাইকেল চালানোয় কারও-কারও রক্তচক্ষু।

প্রতিযোগিতার উপযুক্ত দু’আড়াই লাখ টাকা দামের সাইকেল নেই। নেই ১০-১৫ হাজার টাকা দামের বিশেষ জুতো। অনুশীলন করার মতো মাঠটুকুও নেই। তবু যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে গত বছরের পর ফের দ্বিতীয় বারের জন্য সাইক্লিং-এ রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হল বেলডাঙার দেবকুন্ডু আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গালর্স হাইমাদ্রাসার ছাত্রীরা। এ বার তারাই রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দেবে।

গত ১১ মার্চ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিযোগিতায় দলগত ভাবে অনূর্ধ্ব ১৬ এবং অনূর্ধ্ব ১৪ মিলিয়ে মহিলা বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয় দেবকুন্ডু আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাইমাদ্রাসার ছাত্রীরা। ‘মাস্টার সাইক্লিং’ বিভাগে ছ’টি স্থানের মধ্যে মধ্যে চারটিই দখল করে এই মাদ্রাসা। দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে ওই মাদ্রাসারই চার ছাত্রী— সুরজাহান খাতুন, সুরাইয়া সুলতানা, তানজিলা খাতুন, নাসরিন খাতুন। ‘টাইম ট্রায়াল’ বিভাগে তিনটি পদের মধ্যে দু’টিই দখল করে দেবকুন্ডু মাদ্রাসা। প্রথম হয় সুরজাহান খাতুন, তৃতীয় তানজিলা খাতুন।

একই ভাবে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগের ‘টাইম ট্রায়াল’-এর আটটি স্থানের মধ্যে প্রথম তুহিনা খাতুন, সপ্তম সাদিয়া ফারহানা। ‘মাস্টার সাইক্লিং’ বিভাগের তিনটি স্থানের মধ্যে প্রথমটি দখল করে তুহিনা খাতুন। এবং সব প্রতিযোগীর মধ্যেও প্রথম হয়েছে এই মাদ্রাসারই এক ছাত্রী।

এই ছাত্রীদের মধ্যে এক জন বছর দুই আগেও অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাদ্রাসায় পড়া চালিয়েছে। আর লজঝড়ে সাইকেলে চেপে চালিয়েছে সাইকেল প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি। হাফপ্যান্ট পরে সাইকেল চালালে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না বলে গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতার আগে প্রচার চলিয়েছিল এলাকারই কিছু লোক। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে স্থানীয় বিধায়ক ও মাদ্রাসা পরিচালন সমিতির সদস্যদের নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরেছিলেন প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। তবু এ বছরও ফিরে আসে সেই বাধা। মাদ্রাসার অবৈতনিক কোচ মিলনতারা খাতুন বলেন, ‘‘আমি গিয়ে ওই ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে বলতে বাবা-মায়েরা রাজি হয়ে যায়। কিন্তু জাতীয় স্তরের লড়ার মতো দামি সাইকেল বা জুতো ওদের নেই। এ ভাবে কত দূর ওরা লড়বে!’’

মুর্শিদা খাতুন জানান, মাস কয়েক আগে ৩০-৩৫ হাজার টাকা দামের দু’টি সাইকেল দিয়েছে ‘স্টেট সাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশন’। পড়ে থাকা আরও তিনটি সাইকেল মেরামত করেছেন মিলনতারা। এই পাঁচটি দিয়ে ছাত্রীদের প্রস্তুত করার চেষ্টা চলছে। ‘স্টেট সাইক্লিং‌ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাণী ঘোষ বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, ভাল সাইকেল ও জুতো পেলে ওরা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হবে। সাংসদ, বিধায়ক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্যের হাত বাড়ানো জরুরি।’’

Madrasa Cyclist Prizes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy