Advertisement
E-Paper

কাটমানিতেই পদ, পোস্টার শঙ্করের নামে

প্রত্যাশিত ভাবেই, এই পোস্টার নিয়ে দিনভর জলঘোলা হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কারণ আসলে কাটমানি নেওয়ার নয়, কাটমানি দিযে দলের পদ পাওয়ারই ঈঙ্গিত রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০১:০১
পড়েছে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

পড়েছে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

কাটমানি নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ যে খুব বেশি উঠছে তা নয়। বরং একের পর এক এলাকায় বেনামি পোস্টার পড়ছে বেশি।

হাঁসখালি বা চাপড়ার পরে এ বার সেই পোস্টার পড়ল রানাঘাট ১ ব্লকের রামনগর ১ পঞ্চায়েত। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক তথা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহের ছবি দিয়ে ছাপানো সেই পোস্টার অভিযোগ নয়, রয়েছে একটি প্রশ্ন: ‘এস বি ইঞ্জিনিয়ারিং কম.-এর কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারির কাটমানির জোরেই কি রানাঘাট জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ?’ নীচে সৌজন্যও দেওয়া রয়েছে ‘প্রকৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীবৃন্দ’ নামে।

প্রত্যাশিত ভাবেই, এই পোস্টার নিয়ে দিনভর জলঘোলা হয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কারণ আসলে কাটমানি নেওয়ার নয়, কাটমানি দিযে দলের পদ পাওয়ারই ঈঙ্গিত রয়েছে। ফলে নিশানায় সরাসরি রাজ্য নেতৃত্ব। দ্বিতীয় যে প্রশ্নটা সামনে আসছে, কারা ‘প্রকৃত তৃণমূল’ আর কারা নয়। আর, সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন: এই পোস্টার দেওয়ার পিছনে কারা রয়েছে।

সোমবার সকালে রানাঘাট ১ ব্লকের রামনগর ১ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু এ রকম পোস্টার নজরে আসে স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। তার পরেই দলে সাংগঠনিক রদবদল ঘটানো হয়। নদিয়া জেলাকে দু’টি সাংগঠনিক ভাগে ভাগ করে রানাঘাটের দায়িত্ব দেওয়া হয় শঙ্কর সিংহকে। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা নেতার হাতে দলের দায়িত্ব যাওয়া যে অনেকেরই নাপসন্দ ছিল, তার বহিঃপ্রকাশ আগেও ঘটেছে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরেই রানাঘাট ও শান্তিপুরে লোকালে পোস্টার পড়েছিল, যেখানে শঙ্করকে ‘তৃণমূল ধ্বংসকারী’ বলে অভিহিত করা হয়। আগের বারও পোস্টারের নীচে লেখা ছিল ‘প্রকৃত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী’।

প্রসঙ্গত, ‘এস বি ইঞ্জিনিয়ারিং’ বর্তমানে শঙ্কর সিংহের ছেলে শুভঙ্করের ঠিকাদারি সংস্থা। বহু বছর আগে সেটির মালিকানা শঙ্করের নামে ছিল। এখন তৃণমূলেই প্রশ্ন উঠছে, পোস্টারের বয়ান অনুযায়ী ‘ঠিকাদারির কাটমানি’ তবে কে পেয়েছে? তা হলে কি দলে টাকা দিয়ে পদ বিক্রি হচ্ছে?

রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের দলে এই ভাবে কারও পদ পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। দলের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করার জন্য বিজেপিই এ সব করছে।’’ সদ্য বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদে বসা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের পাল্টা দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁর দলের লোকেরা কাটমানি খায়। এ বার তাঁরা নিজেরা স্বীকার করে নিলেন তাঁদের দলে পদও বিক্রি হয়। এর মধ্যে বিজেপি কোথায় আসছে? মানুষ সব বুঝছে।”

প্রশ্ন হল: কারা আছে এর পিছনে?

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শঙ্কর দায়িত্ব পাওয়ার পরে দলের অনেক পুরনো নেতা তা মেনে নিতে পারেননি। এত দিন ধরে যাঁরা ক্ষমতা ভোগ করেছেন তাঁদের একাধিপত্যে বাধা পড়ছে। এর মধ্যে এঁদের কারও-কারও কায়েমি স্বার্থও জড়িত। তাঁদের কারও ইন্ধনে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী এই কাজ করে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। যে এলাকায় পোস্টার পড়েছে, সেই রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষ দলের অন্দরে শঙ্করের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কিন্তু সেখানে কারা এই পোস্টার দিল, তার সদুত্তর দিতে পারছেন না তাপসও। তবে তিনি বলেন, ‘‘শঙ্করদা দায়িত্ব নেওয়ার পরে অনেকে বুঝতে পারছেন, দল ভাঙিয়ে আর করে-কম্মে খাওয়া যাবে না। তাঁরা রয়েছেন এর পিছনে। কিন্তু ‘প্রকৃত তৃণমূল’-এর ভেক ধরে তাঁরা আসলে দলেরই বদনাম করছেন।’’

শঙ্কর বলেন, “এ সব কথার উত্তর দিতেও আমার রুচিতে বাধে। এই জেলার মানুষ চার দশক ধরে আমায় জানেন, তাঁরা এসব বিশ্বাস করবেন না। যাঁরা এ সব করছেন তাঁদের বলব, আড়ালে না থেকে সামনে এসে যা বলার বলুন।”

Ranaghat TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy