Advertisement
E-Paper

স্বপ্নের উড়ানে ডানা ভেঙেছে অনটন

তেহট্টের ওই তিন কৃতী পড়ুয়ার কাছে এটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন। তাদের স্বপ্নপূরণের পথে একমাত্র অন্তরায় অভাব। কারও বাবা ফেরিওয়ালা কিংবা দিনমজুর। কেউ আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০২:১৫
কৃতী: রবিউল ইসলাম, লাবণী মণ্ডল ও তুহিন সাজ্জাদ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

কৃতী: রবিউল ইসলাম, লাবণী মণ্ডল ও তুহিন সাজ্জাদ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

লেখাপড়াটা ওদের কাছে যুদ্ধের মতো। দাঁতে দাঁত চেপে ওরা লড়ে গিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলও করেছে। কিন্তু এ বার কী হবে?

তেহট্টের ওই তিন কৃতী পড়ুয়ার কাছে এটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন। তাদের স্বপ্নপূরণের পথে একমাত্র অন্তরায় অভাব। কারও বাবা ফেরিওয়ালা কিংবা দিনমজুর। কেউ আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য তাঁরাও এতদিন দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে গিয়েছেন। কিন্তু এ বার তাঁরাও যেন থমকে গিয়েছেন!

থানারপাড়ার নতিডাঙা অমিয় স্মৃতি বিদ্যানিকেতন থেকে রবিউল ইসলাম ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার বাড়ি পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের ডোমকলের পাড়দিয়াড়ে। বাবা হারেজুল্লা শেখের একটি ছোট্ট্ বইয়ের দোকান। রবিউলের স্বপ্ন ভাল কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করা। কিন্তু হারেজুল্লার সামান্য রোজগারে সেটা কি সম্ভব হবে? এই চিন্তায় তার রাতের ঘুম উড়েছে।

বাড়িতে বসে রবিউল বলছে, ‘‘স্কুলের ইংরেজি শিক্ষককে দেখে এতদিন আমিও স্বপ্ন দেখেছি, তাঁর মতো আমিও একদিন পড়াব। ইংরেজি আমার সবথেকে প্রিয় বিষয়। কিন্তু বুঝতেই পারছেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বাবা খুব চেষ্টা করছে। কিন্তু কী হবে জানি না।’’

তেহট্ট সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছে নাটনা গ্রামের লাবণী মণ্ডল। কিন্তু তারপরেও সে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ওই ছাত্রী ও তার পরিবার। লাবণী এ বার নাটনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪৬৭ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সবাইকে চমকে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয়েছে তার পর থেকেই। লাবণীর বাবা পেশায় চাষি সুজিত মণ্ডলের কথায়, “আমার তিন মেয়ের মধ্যে লাবণী সবচেয়ে ছোট। বড় দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অভাবের সংসারে ছোট মেয়েকে খুব কষ্ট করে পড়িয়েছি। অভাবের কারণে মেয়ের কোনও গৃহশিক্ষকও দিতে পারিনি। কিন্তু এ বার কী করে পড়াব সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’’ লাবণী জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সে নার্স হতে চায়।

একই অবস্থা তেহট্টের প্রতাপনগরের তুহিন সাজ্জাদ মণ্ডলেরও। নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তুহিন এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৫৬ নম্বর পেয়েছে। তার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। বরাবর অঙ্কে ভাল তুহিন এ বারেও ৯৮ পেয়েছে। তুহিনের আক্ষেপ, ‘‘এ জন্মে আর চিকিৎসক হতে পারব না। এত টাকা কোথায় পাব? বরং অঙ্ক নিয়ে কোনও কলেজে ভর্তি হয়ে তাড়াতাড়ি একটা চাকরি জোটাতে পারলে সংসারটা বাঁচবে।’’

তুহিনের বাবা পেশায় ফেরিওয়ালা লিয়াকত আলি মণ্ডল বলেন, “গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি করে সামান্য কিছু টাকা ঘরে আসে। তা দিয়ে সংসার চালাব না ছেলের পড়ার খরচ মেটাব? আমি আর সত্যিই পেরে উঠছি না। ছেলেটা লেখাপড়ায় ভাল। অথচ আমি কিছুই করতে পারছি না।”

তেহট্টের মহকুমাশাসক সুধীর কোন্তম জানান, মেধাবী ওই পড়ুয়াদের খোঁজ নিয়ে প্রশাসনিক ভাবে সাহায্য করা হবে।

এখনও পর্যন্ত তিন কৃতীর ভরসা বলতে ওই আশ্বাসটুকুই!

Poverty Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy