Advertisement
E-Paper

হারানো ডিম পাত খুঁজছে  স্কুল-দুপুরে

হপ্তায় এক দিন ডিমের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকা ছেলেপুলেরা এখন ভুলেই গেছে শুভ্র গোলক সেই ডিমের চেহারাটা। চার টাকার ডিম তেতে এখন আট কোথাও ন’টাকা ছোঁয়ায় অগত্যা ভাত-তরকারিতেই বেঁধে রাখতে হচ্ছে মিডডে মিলের মেনু।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪

খয়াটে ব্ল্যাকবোর্ডে আঁকা বাঁকা হরফে মেনুটা মোছা হচ্ছে না দিন কয়েক ধরে। ‘‘কী হবে বলুন তো মুছে, রোজই তো ভাত আর পাঁচ-আনাজি তরকারি’’, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার গলা বড্ড অসহায় শোনায়। মিডডে মিলের বাঁধা মেনু, মোটা চালের ভাত আর শীতের সদ্য ওঠা শীতের তিন-চার রকমের আনাজের পাঁচমিশেলি কম হলুদের অনাদরের তরকারি, ব্যাস। ছেলে-মেয়েদের পেট ভরানোর জন্য আপাতত দিন দশেক ধরে এটাই বরাদ্দ জেলার স্কুলগুলিতে।

হপ্তায় এক দিন ডিমের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকা ছেলেপুলেরা এখন ভুলেই গেছে শুভ্র গোলক সেই ডিমের চেহারাটা। চার টাকার ডিম তেতে এখন আট কোথাও ন’টাকা ছোঁয়ায় অগত্যা ভাত-তরকারিতেই বেঁধে রাখতে হচ্ছে মিডডে মিলের মেনু। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার বেশ কয়েকটি স্কুলে ডিমের তাগিদে স্কুলে আসা কচিকাঁচাদের হাজিরার হারেও টান পড়েছে বলে স্কুলগুলির দাবি।

এ যদি হয় স্কুলের ছবি, তা হলে আসুন জাতীয় সড়ক বরাবর পাইস হোটেলগুলোর দিকে তাকিয়ে নেওয়া যাক। কোথাও বিশ-পঁচিশ একটু সাফসুতরো হোটেল হলে ত্রিশ— ডিম ভাতের সেই মহার্ঘ থালা বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে হোটেলগুলি থেকে। অনেক কষ্টে যেখানে মাছের স্বাদ ডিম দিয়ে ঢাকতে ট্রাক ড্রাইভার থেকে নিত্য বাসযাত্রীদের যে দলটা নিত্য ডিম-ভাতের খোঁজ করত তাদের পাতে এখন স্রেফ সব্জি-ভাত। ডিম মিললেও হোটেলগুলো থেকে দর হাঁকছে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা। কৃষ্ণনগর বা বহরমপুরের মতো শহরের বিরিয়ানির দোকানে শত খুঁজলেও মাংসের টুকরো এবং আলু মিললেও ডিম মিলছে না।ডিমের আকালে স্কুলের পাত থেকে হোটেলের টেবিল হু হু করছে।

মিডডে মিলে প্রথম-পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া পিছু প্রশাসনের বরাদ্দ ৪ টাকা ১৩ পয়সা, ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির জন্য বরাদ্দ কি়ঞ্চিৎ বেশি, ৬ টাকা ১৮ পয়সা। তাতে অবশ্য সুরাহা হচ্ছে না, কারণ গত দিন পাঁচেক ধরে ডিমের দর তপ্ত হতে হতে এখন সাড়ে সাত থেকে আট কোথাও বা ন’টাকা।

বহরমপুরের হাতিনগর হিকমপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ডিম দিতে গেলে হাতে ছেঁকা লাগছে। কিন্তু কী করব, স্কুল উন্নয়ন খাতের টাকা থেকে কিংবা শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেই দিতে হবে!’’ বেলডাঙা দেবকুণ্ডু শেখ আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাই মাদ্রাসা প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘‘আচমকা এক লাফে ডিমের দাম এত বেড়ে গেল যে মেয়েগুলোর মুখে সামান্য ডিম তুলে দিতে হিমশিম অবস্থা।’’

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অবস্থাও কহতব্য নয়। নদিয়ার বাজিতপুরের এক কর্মী জানালেন প্রতি দিন সকালে এলাকার মা-শিশু গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে ডিম ছিল ভরসা। ৩০টি ডিমের দাম বাবদ সরকার ১৩৫ টাকা বরাদ্দ করে। এত দিন সেই টাকাতেই ডিম পাওয়া যাচ্ছিল। এখন তা চড়েছে ১৮০ টাকায়। প্রতি ডিমের জন্য প্রায় দু’টাকা বেশি দিতে খরচা কে দেবে? এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কথায়, ‘‘প্রসূতি মায়েদের মুখের দিকে তাকাতেই কষ্ট হচ্ছে জানেন তো, ওই ডিমটুকুই ভরসা ছিল তো!’’ সেই ভরসার পাতেই চোখ রেখে অপেক্ষা করছে স্কুল থেকে পাইস হোটেল।

Mid Day Meal Eggs Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy