Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Jagaddhatri Puja

Jagaddhatri Puja: সাংয়ের দাবিতে পথে কৃষ্ণনাগরিকেরা

গত বছরও করোনার কারণে সাং নিষিদ্ধ হওয়ার পর কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সমালোচনায় ফেটে পড়েছিলেন।

সাঙের দাবিতে  ভিড় করে পথে নামলেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। মঙ্গলবার।

সাঙের দাবিতে ভিড় করে পথে নামলেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪১
Share: Save:

জগদ্ধাত্রী পুজোয় সাঙের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষ্ণনাগরিকদের একটা বড় অংশ। সাং-কে কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যের অঙ্গ হিসাবে দাবি করে তাঁরা সরকারি নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন। মঙ্গলবার বিপুল সংখ্যায় প্রতিবাদকারী সাঙের দাবিতে লেখা পোস্টার, ব্যানার নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত অবরোধ চলে। রাত ১০টা নাগাদ কৃষ্ণনগর থানা ঘেরাও হয়। চকেরপাড়া মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলে।

গত বছরও করোনার কারণে সাং নিষিদ্ধ হওয়ার পর কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ সমালোচনায় ফেটে পড়েছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁরা উগড়ে দিয়েছিলেন ক্ষোভ। এ বছর তার থেকেও এগিয়ে তাঁরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। মঙ্গলবারই এক নির্দেশিকা জারি করে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে রাতের কার্ফুতে ছাড়া দেওয়া হয়েছে নদিয়া ও হুগলি জেলায়। প্রশাসন আশা করেছিল, এতে সাং বাতিলের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। সাং নিষিদ্ধ বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না কৃষ্ণনাগরিকেরা। সমাজ মাধ্যমে প্রতিবাদী গোষ্ঠী তৈরি করে কৃষ্ণনাগরিকদের একটা অংশ আন্দোলনের ডাক দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগরের পুরসভা মোড়ে বিপুল সংখ্যায় জনতা জড়ো হয়ে সাং-এর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। যদিও প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোনও ভাবেই হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সাং করতে দেওয়া যাবে না।গত রবিবার রবীন্দ্র ভবনে প্রশাসনের সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিগুলির বৈঠকে সাং ও রাজবাড়ি যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। তাতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুজো কমিটির লোকজন। তখন প্রশাসনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, একটি কোর কমিটি তৈরি করা হবে। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধন্ত নেবে। সোমবার রাতে মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কোতোয়ালি থানার আইসি শহরের বেশ কয়েকটি বড় পুজো কমিটিকে নিয়ে কোর কমিটির বৈঠকে বসেন। সেখানেও জানানো হয় যে, সাং ও প্রতিমা নিয়ে রাজবাড়িতে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত কাঁঠালপোতা বারোয়ারির সভাপতি দেবাশিস রায় বলেন, “আমরা প্রথমে সাং ও রাজবাড়ি যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলাম। লাভ হয়নি। পরে শুধু সাং-এর অনুমতি চেয়েও ফল হয়নি। আমরা হতাশ। হতাশ শহরের মানুষ।”

এর পরেই শহরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সমাজ মাধ্যমে তৈরি হয় নাগরিকদের গোষ্ঠী। প্রথমে বিভিন্ন পাড়ার মহিলারা তাতে যুক্ত হলেও পরে পুরুষদেরও যোগ করে নেওয়া হয়। আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত হয়। সমাজমাধ্যমে প্রচার শুরু হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরসভার মোড়ে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ জমায়েত হন। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বিক্ষোভকারীরা সাং-এর দাবিতে অনড় থাকেন।

বিক্ষোভকারী এক মহিলার কথায়, “কৃষ্ণনগর থেকে মাত্র ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে শান্তিপুর ও নবদ্বীপে সাং হল। সেখানে কেউ কিছু বলল না। অথচ কৃষ্ণগরের ক্ষেত্রে বন্ধ!” বিক্ষোভকারী ঈশিতা সাহা বলেন, “কালী পুজোর ভিড়ের পাঁচ-ছয় গুণ বেশি ভিড় হবে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানে। রাজবাড়ি পর্যন্ত যাওয়া বন্ধ করে দিলে গোটা ভিড়টা তিন কিলোমিটারের পরিবর্তে এক কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসবে। প্রশাসন কি মনে করছে দর্শনার্থীদের ভিড় থেকে করোনা ছড়াবে না! আসলে এর পিছনে একটা গভীর চক্রান্ত কাজ করছে।” এরই মধ্যে আগামী ১২ ও ১৩ নভেম্বর জগদ্ধাত্রী পুজোর নদিয়া জেলায় রাতের কার্ফুতে ছাড় দেওয়ায় জেলার মানুষ কিছুটা হলেও খুশি। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা রাজা সরকার যেমন বলছেন, “কৃষ্ণনগরের দীর্ঘ দিনের প্রথা সাং বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। রাজবাজডিতে যাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। তার উপর রাতের কার্ফু থাকলে পুজো পুরোটাই মাটি হয়ে যেত। তবে আরও দু’টো দিন ছাড় থাকলে ভাল হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagaddhatri Puja Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE