Advertisement
E-Paper

শিশুকন্যাকে ছাড়তে রাজি নয় মনোরোগী মা

মানসিক হাসপাতালে ভর্তি কোনও মহিলার শিশু সন্তান থাকলে এবং সেই শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার মতো অন্য কেউ না-থাকলে সে কোথায় থাকবে এই প্রশ্নে বার-বার ধাক্কা খাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৭

মানসিক হাসপাতালে ভর্তি কোনও মহিলার শিশু সন্তান থাকলে এবং সেই শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার মতো অন্য কেউ না-থাকলে সে কোথায় থাকবে এই প্রশ্নে বার-বার ধাক্কা খাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

এ ব্যাপারে রাজ্যের কোনও নির্দিষ্ট নীতি নেই। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকেরাই জানিয়েছেন, বাচ্চা মায়ের কাছাকাছি থাকলে সেটা বাচ্চার পক্ষেও ভাল এবং মায়েরও দ্রুত সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ রাজ্যের মানসিক হাসপাতালে বাচ্চাকে রাখার পরিকাঠামো নেই। ফলে মনোরোগীদের সন্তান নিয়ে একাধিক ঘটনায় দোটানায় পড়ছে স্বাস্থ্য দফতর। যেমন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি এক আদিবাসী মহিলা ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের ক্ষেত্রে হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক আদিবাসী মহিলা। তখন দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। কোনও ভাবে এসে পৌঁছন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। সেখানকার এসিজেএম আদালতের নির্দেশে ইসলামপুর থানার পুলিশ তাঁকে বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালে রেখে যায়। পরে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানার পরে তিনি ভর্তি হন মেডিক্যালে। গত ৭ মার্চ ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সেই থেকে মা ও শিশু মেডিক্যাল কলেজেই রয়েছে।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ গত ১০ মার্চ বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানায়, মাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। মানসিক হাসপাতাল জানায়, তারা মা’কে ফিরিয়ে নেবে কিন্তু বাচ্চাকে মানসিক হাসপাতালে রাখার নিয়ম নেই, তাই সে মেডিক্যাল কলেজেই থাকবে। সেইমতো তারা ওই মহিলাকে নিতে গাড়িও পাঠায়। কিন্তু বাচ্চাকে ছেড়ে যেতে বেঁকে বসেন মহিলা। এমনকী মেডিক্যাল কলেজের যে এসএনসিইউ-এ সদ্যোজাত রয়েছে, সেখান থেকেও মহিলাকে নড়ানো যায়নি। হাসপাতালের নার্সদের কথায়, ‘‘তিনি এসএনসিইউয়ের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। সরিয়ে দিলেও মহিলা বিভাগ থেকে উঠে প্রায়ই মেয়েকে দেখে যাচ্ছেন।’’

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ মার্চ মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, মহিলার ছুটি হয়ে গিয়েছে। পরদিন মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাড়িও পাঠায়। কিন্তু কোলের সন্তানকে ছেড়ে ওই মহিলা মানসিক হাসপাতালে যেতে চাননি। মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মায়ের সঙ্গে শিশুটিকেও নিয়ে যাচ্ছে না কেন? মানসিক হাসপাতালের সুপার পবিত্রকুমার সরকার বলেন, “দুধের শিশুকে এখানে রেখে দেখভাল করার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া মহিলার সঙ্গে শিশুকে রাখলে ঝুঁকি হতে পারে। হঠাৎ উত্তেজিত মহিলা সন্তানের ক্ষতি করতে পারেন। তখন কী হবে?’’ কিন্তু, বহরমপুর মেডিক্যালের মেডিক্যাল বোর্ড তো বলে দিয়েছে তিনি সুস্থ। তা হলে এখন কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না? সুপার উত্তর দেন,‘‘বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।’’

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিক্যালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মা ও সন্তানকে আপাতত তাঁদের হাসপাতালে রখে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সেটাও কত দিন? তাঁর কথায়, ‘‘মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওই মহিলার বাড়ি খুঁজে অবিলম্বে খবর দেওয়া উচিত। কারণ তিনি ওই হাসপাতালের রোগী।’’

একাধিক সরকারি মানসিক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায় জানান, সরকারের নির্ধারিত নীতি নেই বলে তারা বারবার মুশকিলে প়ড়ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের উচিত আইন করে মানসিক হাসপাতালের পাশেই ক্রেশ চালু করা, যাতে মনোরোগীর শিশু সন্তান চাইলে থাকতে পারে। দিনের মধ্যে কয়েকবার মা এসে তাকে দেখে যাবে। অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে এইরকম ক্রেশ রয়েছে সরকারি মানসিক হাসপাতালের সঙ্গে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মনোরোগী বলে তাঁদের সন্তান পালনের অধিকার থাকবে না এটা তো হতে পারে না।’’

স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-ও এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ‘‘ক্রেশ গড়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা জায়গা দিয়ে দেব, কর্মীদের বেতনও দেব। কর্মীদের নিয়োগ করে বিষয়টি পরিচালনা করতে হবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। কেউ আগ্রহ দেখালে আমাদের আপত্তি নেই।’’

Baharampur Psychopathic Children Odisha Health department Malay dey Medical college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy