ওঁরা কেউ কাকভোর থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আবার টানা ১১ দিন ধরে ডাকঘর আর বাড়ি যাতায়াত করছেন। লক্ষ্য একটাই, আধার কার্ড সংশোধন করা। মনের মধ্যে সর্বক্ষণ কাঁটার মতো বিঁধছে, এই বুঝি এ রাজ্যেও থাবা বসাল ‘এনআরসি’। আর সেই ভয়ে পুজোর বাজার শিকেয় তুলে বহরমপুর ডাকঘরের সামনে আধার কার্ড সংশোধনের লাইনটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।
দুয়ারে পুজো। এর পরে আর কবে পুজোর বাজার হবে? বালিরঘাটের ঝর্ণা বিশ্বাস, লালবাগের অসিত বর্মন, জিয়াগঞ্জের শিল্পী মৈত্র, চর কাবিলপুরের গুঞ্জন রায় ম্লান হেসে বলছেন, ‘‘নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত মিলছে না তো পুজোর বাজার! এই আধার কার্ড সংশোধনের চক্করে পড়ে চোখে আঁধার দেখছি মশাই।’’
কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। সকাল থেকেই ডাকঘরের সামনে থিকথিক করছে ভিড়। দিনভর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকছেন লোকজন। কেউ কেউ আবার টিফিনবাক্সে নিয়ে এসেছেন রুটি, সব্জি। তাঁরা বলছেন, ‘‘কখন বাড়ি ফিরব তার ঠিক নেই। তাই খাবারটা সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছি।’’ হরিহরপাড়ার এক যুবক বলছেন, ‘‘পুজোটা এবার মাটি হয়ে গেল। যেনতেন প্রকারেণ এখন আধার কার্ড সংশোধনটা বেশি জরুরি। সেটা না করলে শান্তি পাচ্ছি না।’’
বহরমপুরের ব্যবসায়ী পাপাই পোদ্দার, পার্থ ঘোষদের কথায়, ‘‘এ বারে ভাল বৃষ্টি হয়নি। বহু জমিতে পাট এখনও দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামের লোকজনের হাতে তেমন টাকা নেই। তার উপরে এই এনআরসি-র আতঙ্কে মানুষের মাথার ঠিক নেই। সকলেই ব্যস্ত নিজেদের নথিপত্র ঠিক করার কাজে। ফলে তার একটা প্রভাব পুজোর বাজারে তো পড়ছেই।’’
লালবাগের সুমন সরকার বলছেন, ‘‘ছেলেটার জন্য একটা জামা কিনেছি। আর কারও জন্য কিছু কেনা হয়নি এখনও। কার্ডের ঝামেলাটা মিটে গেলেই সবাইকে নিয়ে পুজোর বাজার করতে যাব।’’ আপাতত সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছে বাজারও।