Advertisement
E-Paper

পলকা ভ্যান নিয়ে প্রশ্ন, বিপদ যখন অ্যাম্বুল্যান্স

জাতীয় সড়কে কাজ চলায় পাশের লেনে ঢুকে ট্রাকের মুখোমুখি পড়েছিল বহরমপুর থেকে চক্ষু শিবিরে যাওয়া বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সটি। দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে তাতে আগুন ধরে যায়।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১২

জাতীয় সড়কে কাজ চলায় পাশের লেনে ঢুকে ট্রাকের মুখোমুখি পড়েছিল বহরমপুর থেকে চক্ষু শিবিরে যাওয়া বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সটি। দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে তাতে আগুন ধরে যায়।

ফলে, জাতীয় সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে কী ধরনের গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। কেননা রঘুনাথগঞ্জের কাছে দুর্ঘটনায় পড়া ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি ছিল ভ্যান গোছের ছোট হালকা গাড়ি। তা না হলে এবং দ্রুত তাতে আগুন লেগে না গেলে চার জনের মৃত্যু না-ও হতে পারত বলে মনে করছেন অনেকে।

গত তিন মাসে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ৩৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার বড় অংশই পলকা ভ্যান জাতীয়। রোগী নিয়ে যাতায়াতের জন্য এই ধরনের গাড়ি কতটা নিরাপদ, চিকিৎসক থেকে জনপ্রতিনিধি সকলেই সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান।

হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্য দফতর যে অ্যাম্বুল্যান্স কেনে তার বড় অংশই এই ধরনের হালকা গাড়ি। বিধায়ক বা সাংসদেরাও তাঁদের তহবিল থেকে এই ধরনের অ্যাম্বুল্যান্স দেন। যদিও বড় গাড়িও দেন অনেকে। বহু ক্ষেত্রেই বাজার চলতি গাড়ি কিনে তাতে কিছু রদবদল ঘটিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে নেওয়া হয়। এবং সে ক্ষেত্রে সস্তার গাড়ি কিনে অ্যাম্বুল্যান্স করে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে অনেকেরই।

বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী জানান, উন্নয়ন খাতে কেন্দ্র মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা দেয়। ফলে পেট্রোলে চলা সস্তা গাড়ি দেওয়ার প্রবণতা থাকে। সম্প্রতি তিনিও দু’টি সংস্থাকে ওই অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। সমশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম আবার বলেন, ‘‘নিরাপদ নয় বলেই ওই রকম পলকা অ্যাম্বুল্যান্স দিইনি।’’ বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘কোনও দিনই ওই ধরনের পলকা ভ্যান দিইনি আমি। ভিতরে জায়গাও কম। অক্সিজেন সিলিন্ডার বা অন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার জায়গাও বিশেষ নেই।’’

মজার কথা, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের জন্য যে মাতৃযান বা নিশ্চয় যান রয়েছে, তার সিংহ ভাগই হালকা ভ্যান। নদিয়া জেলা হাসপাতালে ৩৯টি নিশ্চয় যান চলে, তার সবই ওই। এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, “পলকা গাড়িগুলি বিপজ্জনক। দুর্ঘটনা তো পরের কথা, ওই অ্যাম্বুল্যান্সের কারণেই প্রসূতিদের নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে।”

তবু কেন চলে এই ধরনের ভ্যান?

নিশ্চয় যানের মালিকদের দাবি, সরকার প্রসূতি বহনের জন্য যে টাকা দেয়, তাতে বড় গাড়ি চালানোর খরচা পোষায় না। জেলা হাসপাতাল সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের দাবি, “আমরা ফিটনেস সার্টিফিকেট দেখে অনুমোদন দিই।” যদিও গাড়ির মালিকদেরই একাংশের দাবি, অন্তত দশটা গাড়ি পাঁচ বছরের বেশি পুরনো।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ অ্যাম্বুল্যান্স ইউনিয়নের সম্পাদক খোকন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের ৭২টি অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে ওই হালকা ভ্যান রাখিনি। ওতে তিন জনের বেশি বসতে পারে না। চালকের আসনের নীচে ইঞ্জিন। সেটাও সুবিধের নয়।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতর যদি এই সব গাড়িকে অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে পথে নামার অনুমতি দেয়, আমাদের করণীয় কিছু নেই।’’ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনন্তচন্দ্র সরকার পাল্টা বলেন, ‘‘আইন মেনেই আমরা অনুমতি দিই। এক ধরনের গাড়িকে আটকাতে গেলে আইন পাল্টাতে হবে।’’

(সহ প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার)

ambulance বহরমপুর কৃষ্ণনগর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy