ছবি:অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
সাত বছর আগে বিয়ের সময় স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার। কিন্তু দিন আনি দিন খাই দিনযাপনে তা আর হয়ে উঠছিল না। কাশ্মীরে যাওয়ার আগে তাই বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে গিয়েছিলেন। কথা ছিল বাড়ি ফিরেই বাকি কাজটুকু করিয়ে সাত বছরের পুরনো কথা রাখবেন।
রফিকুল শেখ ফিরলেন বটে, তবে কফিনবন্দি হয়ে। অসম্পূর্ণ সেই র্শৌচাগারের দিকে তাকিয়ে রফিকুলের স্ত্রী মারিয়া বিবি বলছেন, ‘‘ও দিকে তাকাতে পারি না, তাকালেই মানুষটার মুখ ভেসে ওঠে।’’ ক্ষতিপূরণের টাকা এসেছে বাড়িতে। মারিয়া শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে বলছেন, ‘‘ওঁর কথা রাখতে আমরাই কাজটা করব।’’ গ্রামের মধ্যে টিনের চালা দেওয়া মাটির বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর দু’টি শিশু সন্তান। ৬ বছরের আফরোজা ও ইস্তাক। ছন্নছাড়া উঠোনে এখন লাউমাচার জঙ্গল।
মাবিয়া বলছেন, “বিয়ের আগে গ্রামেই দিনমজুরি করতেন। চাষির ছেলে হয়েও ধান পোঁতার কাজটা তেমন জানতেন না। বিয়ের পর ছেলেমেয়ে হতেই চাপ পড়ে সংসারে। শ্বশুরও আর পারছিলেন না। তাই বছর চারেক ধরে গ্রামের লোকজনের কথাতেই কাশ্মীরে যাতায়াতের শুরু। এ বারও গিয়েছিল ২৮ দিন আগে। ফোন করতেন প্রতি দিন সন্ধেয়। আমার সঙ্গে তো কথা হতই, মেয়ের সঙ্গে কথা না বলে ফোন ছাড়ত না কোনও দিন।’’
ইদানিং ফোন করা যেত না বলে আর ফোন আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবু দুঃশ্চিন্তা হয়নি কখনও মারিয়া বিবির। বলছেন, ‘‘ফোন না পেয়ে কষ্ট হত, তা বলে দুশ্চিন্তা হয়নি কখনও। এখন অবাক লাগে, সেই লোকটা সত্যিই নেই!’’
পাশে বসে বৃদ্ধা শাশুড়ি বলছেন, “সে দিন সাত সকালেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাড়িতে টিভি নেই। তাই অত খবরও রাখতাম না কেউই। সে দিন, দরজাটা খুলে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশ। ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু বুঝিনি এত বড় দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে তাঁরা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy